পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: সমাজে আর পাঁচটা কুখ্যাত, হাড়হিম ঘটনার মধ্যে অন্যতম নিঠারি হত্যাকাণ্ড। যার বীভৎসতা ২০০৬ সালের দিকে গোটা সমাজকে কাঁপিয়ে রেখে দিয়েছিল। সেই নিঠারি হত্যা মামলা থেকে খালাস পেয়ে গেলেন প্রধান অভিযুক্ত সুরেন্দ্র কোহলি সহ মনীন্দ্রর সিং পান্ধার। আদালত সূত্রে খবর, সুরেন্দ্রকে ১২টি মামলায় এবং মনীন্দ্রকে দু’টি মামলায় ‘বেকসুর’ ঘোষণা করেছে উচ্চ আদালত। সোমবার ইলাহাবাদ হাইকোর্ট এই রায় দিয়েছে। বিচারপতি অশ্বিনী কুমার মিশ্র ও বিচারপতি সৈয়দ আফতাব হুসেন রিজভি অন্তত ১২টি মামলায় নির্দোষ বলে ঘোষণা করেছে। আগে দুজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ রদ করে দুই অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দেওয়া হল। আদালতের তার পর্যবেক্ষণে জানায়, তাদের বিরুদ্ধে যথার্থ তথ্যপ্রমাণ হাজির করা যায়নি। তাই তাদের মৃত্যুদণ্ড রদ করা হল।
উল্লেখ্য, ২০০৫- ০৬ সালের দিকে দিল্লির নয়ডায় গোটা সমাজকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল হাড়হিম করা নিঠারি হত্যাকাণ্ড। একাধিক নাবালিকাকে খুন ও ধর্ষণ করে, নরমাংস ভক্ষণ, শবদেহের সঙ্গে সঙ্গম করেছিল কোহলি।
২০০৬ সালে নিঠারি গ্রামের একটি নিকাশি নালায় কিছু কঙ্কাল মেলে। পরে কোহলি পুলিশের কাছে জানায় কাছের জমিতে খুঁড়লে আরও দেহ মিলবে। কিভাবে সে এই কাজ করেছে, মাংস খাওয়ার কথাও পুলিশকে জানায় সে। সিবিআইয়ের কাছে তদন্তভার যায়। নিঠারির ব্যবসায়ী পান্ধেরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ১৯টি কঙ্কাল এবং কিছু দেহাবশেষ।
সুরিন্দর কোহলি বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিবিআই। পান্ধারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে। ধর্ষণ, খুন, দেহ লোপাটের অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। দুজন পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে কর্তব্যের গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। একাধিক শিশুর নিখোঁজের পরেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে এই নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে।
নয়ডাতেই রয়েছে সেই বাড়ি। সেই বাড়িতেই এই কুকর্ম চালানো হত। বাড়ির কাছে থাকতেন বাংলা ও বিহারের পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাদের শিশুদেরই অপহরণ করে এই কাণ্ড ঘটনা হত।
নিঠারি কাণ্ডের ১৯টি মামলার মধ্যে যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে তিনটি মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ১৬টি মামলার মধ্যে সাতটিতে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয় কোহলিকে। মনীন্দ্রর সিং পান্ধার অবশ্য মামলায় জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন। সবচেয়ে আলোচিত ছিল পিঙ্কি সরকার খুন।
সিবিআই তদন্তে জানতে পারে, ২০ বছর বয়সী পিঙ্কি মণীন্দ্রের বাড়িতে পরিচারিকার কাজে ঢুকেছিলেন। সেখানে তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করে খুন করা হয়। সুরেন্দ্র দোতলার কলঘরে তাঁকে খুন করেন। তার পর তাঁর মাথা কেটে বাকি দেহ প্রেশার কুকারে রান্না করে খেয়ে নেন বলে অভিযোগ ওঠে। ২০০৭ সালের এপ্রিলে পিঙ্কির জামাকাপড় শনাক্ত করেন তাঁর বাবা-মা। পরে সুরেন্দ্র নিজেই পিঙ্কির চটিজোড়া শনাক্ত করেন।
তদন্তকারী সংস্থার দাবি, অন্য মামলাগুলিতেও শিশুদের ধর্ষণ করে খুন, মাংস খাওয়ার কথা জবানবন্দিতে জানায় অভিযুক্ত।