পারিজাত মোল্লা: আগের শুনানি পর্বে সিবিআই তদন্ত এর হুশিয়ারি দিয়েছিলেন, তবে এবার আস্থা রাখলেন রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডির উপর। শুক্রবার যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল’কলেজের মামলায় নয়া মোড়। অধ্যক্ষা সুনন্দা ভট্টাচার্য গোয়েঙ্কার বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। নথি জাল করে কলেজের শিক্ষক পদে যোগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এদিন বলেন, -‘ গত পাঁচ বছর ধরে তদন্তের পরও কলকাতা পুলিশের অ্যান্টি ফ্রড সেকশন ওই মামলার কোনও কিনারা করতে পারেনি।সেই কারণেই তদন্তের ভার সিআইডি-কে দেওয়া হল’।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, -‘সুনন্দাকে শুধু জিজ্ঞাসাবাদই নয়, প্রয়োজনে হেফাজতেও নিয়ে পারবে সিআইডি’। আদালত সুত্রে প্রকাশ, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল’কলেজের পরিচালন সমিতির (গভর্নিং বডি) প্রাক্তন সদস্য তথা অধ্যক্ষ সুনন্দা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে নথি জালিয়াতি এবং আর্থিক অনিয়মের মামলা করেন। যার প্রেক্ষিতে নিম্ন আদালত এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দেয়। ওই বছর নভেম্বর মাসে এফআইআর করা হয়। এর পর তদন্ত শুরু করে চারু মার্কেট থানা। পরে তদন্তভার হাতে নেয় কলকাতা পুলিশের অ্যান্টি ফ্রড সেকশনে। সুনন্দার বিরুদ্ধে যে সব ধারায় মামলা রুজু হয়েছে, তাতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অন্তত ১০ বছর সাজা হতে পারে। দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
আগামী ১৮ অক্টোবর তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সিআইডিকে।সম্প্রতি সুনন্দা ভট্টাচার্য গোয়েঙ্কাকে অধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ। পরে অধ্যক্ষ ডিভিশন বেঞ্চে গেলে, তাঁকে ওই পদে বহাল রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে মূল মামলাটি শুনছেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ই।কলকাতা পুলিশ এই তদন্তে ব্যর্থ হওয়ায় সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হল বলে জানান বিচারপতি । ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন সম্পাদক আর্থিক দুর্নীতি, জালিয়াতি-সহ একাধিক অভিযোগে মামলা দায়ের করেছিলেন ।চারু মার্কেট থানায় ২০১৮ সালে তিনি যান অভিযোগ জানাতে ।
কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ । এরপর আদালতের মাধ্যমে এফআইআর দায়ের করেন তিনি । কিন্তু মিসটেক অফ ফ্যাক্ট বলে তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয় । যদিও তদন্তে পুলিশ জানায়, সুনন্দা গোয়েঙ্কাকে কলেজ সার্ভিস কমিশন সুপারিশ করেছে । পুলিশ ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেয় । কিন্তু ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার ব্যাপারে অভিযোগকারীকে পুলিশ কিছু জানায়নি বলে অভিযোগ ।আদালতের মতে, এ ক্ষেত্রে সরকারি নিয়মবিধির ধার ধারেনি পুলিশ । বিচারপতি বলেন, কলকাতা পুলিশের অ্যান্টি ফ্রড সেকশন তদন্তে ব্যর্থ হয়েছে । তাই সিআইডি-কে এই মামলার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে ।
যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল’ কলেজ নিয়ে তদন্ত করবে সিআইডি । প্রয়োজনে সুনন্দা গোয়াঙ্কাকেও জেরা করা যাবে । তাঁকে হেফাজতে নেওয়া দরকার কি না, সিআইডি সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে আদালত ।আদালত সুত্রে প্রকাশ, ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর চারু মার্কেট থানায় দায়ের করা অভিযোগের তদন্ত করবে সিআইডি । এর আগে ২০১৯ সালে সুনন্দাকে দেওয়া হাইকোর্টের রক্ষাকবচ নিয়ে বিচারপতি এদিন জানান, -:সুনন্দার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না – এই নির্দেশের মেয়াদ তিন বছর পেরিয়ে গিয়েছে । তাই এখন আর কোনও রক্ষাকবচ নেই’ । আগামী ১৮ অক্টোবর তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে সিআইডিকে রিপোর্ট দিতে হবে আদালতে ।