পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ব্যাপকভাবে রকেট হামলা চালানো হয়েছে। রকেট হামলা শুরু হলে ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবসহ আল-কুদস, সিদে বোকার, আরাদ ও দিমোনা শহরে নাগরিকদের সতর্ক করে সাইরেন বাজানো হয়।
হামাসের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত হামলায় নিহত ২২ ইসরাইলি। যদিও সূত্রের খবর, নিহতের সংখ্যা আরও বেশি। হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। নেতানিয়াহু রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করার ধাঁচে বলেছেন, আমরা এখন যুদ্ধক্ষেত্রে আছি। গাজায় যে ইসরাইল ব্যাপক পালটা হামলা চালাবে, তা তার কথা শুনেই অনুমান করা যাচ্ছে। দুপক্ষের এই সংঘর্ষ সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলত ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী আন্দোলন ফের একবার আলোচনার কেন্দ্রতে বিশ্বজুড়ে।
ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এই সাহসী হামলার পিছনে রয়েছে।অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উপর দখলদার ইসরাইলি সেনাদের বেড়ে চলা হামলা ও হত্যাযজ্ঞের জবাব দিতে হামাস এই হামলা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে। কয়েকমাস থেকেই হারাকাত গোষ্ঠী ইসরাইলকে যোগ্য জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিশেষ করে আল আকসায় ইহুদিবাদীদের তাণ্ডব ও একের পর এক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করার ঘটনায় রমযান মাস থেকেই ক্রমশ তেতে উঠছিল ফিলিস্তিনের মাটি। শনিবারের এই হামলার মধ্য দিয়ে তার বিস্ফোরণ ঘটল। এদিন হামাসের রকেট হামলার পর ইসরাইলের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেড জানিয়েছে, শনিবার তারা গাজা উপত্যকা থেকে অন্তত ৫০০০ রকেট ছুড়েছে।
IDF publishes footage of strikes on Hamas assets in the Gaza Strip. Air Force jets have used so far more than 16 tons of munitions. pic.twitter.com/TpvK9f21oX
— Emanuel (Mannie) Fabian (@manniefabian) October 7, 2023
হামাস ঘোষণা দিয়েছে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে তারা ‘আল আকসা ফ্লাড’ অভিযান শুরু করেছে। হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, কোনও জবাবদিহি ছাড়া ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের লাগামহীন অপরাধযজ্ঞের অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাদের সময় শেষ।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও থেকে দেখা যায় ইসরাইলের আশকেলন শহরে রকেট হামলার পর একটি স্থানে ব্যাপক কালো ধোঁয়া উড়ছে। ইসরাইলের সামরিক অফিসাররা জানিয়েছেন, রকেট হামলার পর যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং যুদ্ধমন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত জরুরী ভিত্তিতে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। নেতানিয়াহু বলেন, আমরা যুদ্ধের মধ্যে আছি, এটা কোনও অভিযান নয়, কোনও উত্তেজনা নয়, এটা যুদ্ধ।
রকেট হামলার জবাবে ইসরাইল হামাসের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের দাবি তারা হামাসের ১৭টি সেনা কম্পাউন্ডে হামলা করেছে। ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স আইডিএফ তাদের নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম এক্সে জানিয়েছে তারা এখন পর্যন্ত ১৭টি সেনা কম্পাউন্ড আর হামাসের অপারেশনের চারটি হেডকোয়ার্টারে হামলা করেছে তারা।
ইরান এই ফিলিস্তিনি হামলার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা খামেনির উপদেষ্টা ইসরাইলের উপর ফিলিস্তিনি হামলার পক্ষে কথা বলেছেন। রহিম সাফাভি বলেছেন, আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অভিনন্দন জানাই, যতক্ষণ ফিলিস্তিন ও জেরুসালেমের স্বাধীনতা না আসে আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের পাশে থাকব।তবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যথারীতি ইসরাইলের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে।ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তীব্র ভাষায় এই হামলার সমালোচনা করে বলেছেন, আমি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি আমার পূর্ণ সমবেদনা জানাই।যদিও ফিলিস্তিনিরা মরলে তিনি সমবেদনা জানানোর কথা ভুলে যান। জার্মানির বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, নিরীহ বেসামরিক লোকদের উপর সহিংসতা ও রকেট হামলা এখনি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ইউরোপিয়ান কমিশনও। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন এই হামলাকে ‘জঘন্য সন্ত্রাসী হামলা’ বলে বর্ণনা করেছেন। রাশিয়ার ডেপুটি বিদেশ মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া হল, আমরা সবসময় সবার সংযত আচরণ আশা করি।আর আমেরিকা এই হামলার নিন্দা জানিয়ে দুই পক্ষকেই হিংসা বন্ধের আহবান জানিয়েছে।
📢*IMPORTANT ADVISORY FOR INDIAN NATIONALS IN ISRAEL*
For details visit-
Israel Home Front Command website: https://t.co/Sk8uu2Mrd4Preparedness brochure: https://t.co/18bDjO9gL5 pic.twitter.com/LtAMGT9CwA
— India in Israel (@indemtel) October 7, 2023
উল্লেখ্য, গাজা হল ফিলিস্তিনের একটি ছোট্ট ভূখণ্ড। এটা স্বশাসিত। তবে তাদের দিকে হাত বাড়িয়েছে ইসরাইল। তারা পশ্চিমতীর, পূর্ব জেরুসালেমসহ ওই উপত্যকাকে দখল করে নিতে চায়। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর থেকেই এই ধারা শুরু হয়েছে। ভূমধ্যসাগরের পাড়ে অবস্থিত এই উপত্যকা ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১০ কিলোমিটার চওড়া। একদিকে ভূমধ্যসাগর, তিন দিকে ইসরাইল ও দক্ষিণ দিকে মিশরের সিনাই সীমান্ত। এলাকাটি কড়া প্রহরাধীন এবং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঘেরা। শ’খানেক বর্গমাইল আয়তনের এই ছোট এলাকাটুকুর মধ্যে বাস করেন প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি। ১৯৪৮ সালে অবৈধভাবে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বে গাজা ছিল ফিলিস্তিনের অংশ। ১৯৪৮ সালে জাতিনিধন, হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে সৃষ্টি করা হয় ইসরাইল।
১৯৪৮ সালের ওই যুদ্ধের সময় গাজা ছিল মিশরের নিয়ন্ত্রণে। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তা তাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। প্রতিবেশী অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে যুদ্ধে ফিলিস্তিনের অন্য ভূখণ্ডগুলো দখল করে নেয় ইসরাইল। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের মূল ইস্যুগুলোর অন্যতম হল গাজা। ২০০৭ সালের জুন থেকে এখন পর্যন্ত দখলীকৃত গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর ব্লকেড আছে। সেখানে আকাশসীমা, সমুদ্রসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে ইসরাইল। গাজার আকাশপথ, জলপথ ও তিনটি সীমান্ত ক্রসিংয়ের মধ্যে দুটি নিয়ন্ত্রণ করে ইসরাইল। তৃতীয় ক্রসিং নিয়ন্ত্রণ করে মিশর। হামাস ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনি আইনসভার নির্বাচনে জয়ী হয়। হামাসের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর খুব দ্রুত ইসরাইল এই এলাকাটির ওপর অবরোধ আরোপ করে। গাজা ও ফিলিস্তিনের অন্য এলাকার মধ্যে লোকজন ও পণ্যের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এর মধ্যেই চলছে গাজাবাসীর দুঃসহ জীবন।