পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ৫ অক্টোবর দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিকিমে দুর্যোগের বলি কমপক্ষে ১৪ জন। ২২ সেনাকর্মী সহ ১০২ জন এখনও নিখোঁজ। সিকিমে আটকে পড়া পর্যটকের সংখ্যা এখনও পরিষ্কার নয়। সিকিমের সিংগটামের বাসিন্দা মীনা তামাং দ্যা কুইন্টকে জানান, ‘আমি এর আগে তিস্তার এমন রুদ্ররূপ কখনও দেখিনি।’ ৪ অক্টোবর দ্যা কুইন্টের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর কণ্ঠ কেঁপে উঠছিল। সিংগটামে তিস্তার পাড়ে তাঁর দোতলাবাড়িতে তিস্তার জল ঢুকতে শুরু করায় মীনা ৪ অক্টোবর মধ্যরাতে কোনওমতে কাপড়চোপড় নিয়ে নিজের ঘর ছাড়তে হয়। মীনা আরও জানান, ‘পুলিশ রাত ১টা নাগাদ বাঁশি বাজিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করতে শুরু করে। প্রথম দিকে আমরা খুব একটা পাত্তা দিইনি, ভেবেছিলাম সরকারি কোনও কাজকর্ম চলছে। কিন্তু আধঘণ্টার মধ্যে পুলিশকে বাসিন্দাদের দরজায় দরজায় দেখা যায়। পুলিশ জানায়, তিস্তার জলস্তর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, যত দ্রুত সম্ভব আমরা যেন ঘরখালি করে নিরাপদ স্থানে চলে যাই।’ মীনা তাঁর ছেলে, পুত্রবধূ এবং দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে বেরিয়ে যান। সিকিমে পর্যটকদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো সিকিমের এক ড্রাইভার রংপো পশ্চিম, পাকিয়ং জেলার বাসিন্দা নিশান্ত গুপ্তা এই ভয়াবহ দুর্যোগে হারিয়েছেন পুরো পরিবার। হারিয়েছে তাঁর গর্ভবতী স্ত্রী এবং ৪ বছরের সন্তানকে। তিনি জানান, ‘প্রাণে বাঁচতে আমি আর আমার বাবা গাছে উঠে পড়ি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমার স্ত্রী চার বছরের ছেলের গাড়িটি আমার চোখের সামনে ভেসে চলে গেল। আমি ওদের বাঁচাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার সামনে কোনও পথ খোলা ছিল না। শেষ যেটা শুনতে পেলাম তা হল আমার ছেলের চিৎকার বাবা আমাদের বাঁচাও।’ নিশান্তের স্ত্রীর ১০ দিন পরেই ডেলিভারি হওয়ার কথা ছিল। ‘আমরা নতুন অতিথির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। দশহরায় আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার ছিল। কিন্তু ভাগ্যের পরিকল্পনা ছিল অন্য।’ একইভাব পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিম সীমান্তে মেল্লি শহরের বাসিন্দা ৩২ বছরের দিনমজুর শ্রমিক ব্রিজকুমার সাহু জলের প্রবল স্রোতে হারিয়েছেন তাঁর পরিবার। তিনি জানান, ‘আমি গভীর ঘুমে ছিলাম, রাত ৩টে নাগাদ আমার মনে হল বিছানা ভিজে যাচ্ছে। আমি উঠে দেখি আমার ঘরে জল ঢুকে গেছে। দ্রুত পরিবার সমেত ঘর থেকে বেরিয়ে উপরের দিকে ছুটতে থাকি।’ তিনি তাঁর ভাই এবং বাবাকে বাইরে বের করে আনতে পারলেও তাঁর গর্ভবতী বৌদি এবং ৫ বছরের ভাইপো ঘরের অন্য অংশে আটকে পড়ে। ব্রিজকুমার জানান, ‘জলের স্রোত এতটাই তীব্র ছিল যে আমরা ওদের কাছে পৌঁছতেই পারলাম না।’
অরুণ সুব্বা সিংগটামের বাসিন্দা এবং শহরের উদ্ধারকার্যে জড়িত স্বেচ্ছাসেবক উদ্ধারকার্র্যে মূল চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। গ্যাংটকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কন্ট্রোল রুমের আধিকারিকরা বলছেন, চুংথাং-এ রাস্তা এবং যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, তারা পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্দাজ করতেই পারেননি।
অন্য এক আধিকারিক হিন্দুস্থান টাইমসকে জানান, ‘চুংথাং-এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, হঠাৎই জলোচ্ছাসে বাঁধ ভেঙে যায়। শহরেও প্রভাব পড়েছে। বুধবার তিস্তার জলস্তর অস্বাভাবিক বাড়তে থাকায় দ্রুত বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে হতাহতের সংখ্যা খুব বেশি নয়।’ অন্য এক আধিকারিক জানান, আবহাওয়ার কারণে তিনটি এনডিআরএফ-এর কোম্পানি প্রতিবেশি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের বাগডোগরায় আটকা পড়েছে, কারণ হেলিকপ্টার সিকিমের উদ্দেশে রওনা হতে পারেনি। তিনি জানান, ‘আবহাওয়া পরিষ্কার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, একটি কোম্পানি মাঙ্গান জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চুংথাং-এ পাঠানো হবে। বাকি দুটি কোম্পানিকে গ্যাংটক এবং পাকিয়ং-এ মোতায়েন করা হবে। ’