প্রদীপ মজুমদার: কোনোরকম সচেতনতার প্রচারের পথে পা না বাড়িয়ে নাবালিকা বিবাহ বন্ধ করার নামে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে অসমের হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকার। অতীতে যারা যারা নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে করে সুখে সংসার করছেন, তাদেরকেই নিশানা বানিয়ে গ্রেফতার করছে হিমন্তের পুলিশ। অসম পুলিশের ডিজি জিপি সিং দাবি করেছেন, অসম থেকে বাল্য বিবাহ নির্মূল করা হবে আগামী দু’বছরের মধ্যে। এর জন্য প্রতি বছর দু’বার করে পুলিশি অভিযান চালানো হবে।
অসম পুলিশের শীর্ষকর্তা জানান, সবকিছু যাচাইয়ের পর প্রথম পর্যায়ে ৪,৫১৫টি বাল্য বিবাহের ঘটনা সামনে আসে। সেই সময় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৩,৪৮৩ জনকে। ধৃতদের মধ্যে ৯৫ শতাংশের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে চার্জ গঠন করা হয়েছে। একই পদ্ধতিতে গত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত যাচাইয়ে ৭১০টি বাল্য বিবাহের ঘটনার কথা জানা যায়। আর এতে জড়িত ১,১০০ জন অভিযুক্তের মধ্যে ৯১৫ জনকে গত মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, বাল্য বিবাহের দায়ে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের সিংহভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের। অসমিয়া, বিশেষ করে জনজাতির মানুষদের মধ্যে অল্প বয়সে বিয়ের চল থাকলেও ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জোরালো অভিযোগ উঠছে। বাল্য-বিবাহ বিরোধী অভিযানে নেমে যেভাবে পুলিশ ব্যাপক হারে ‘অবৈধ’ স্বামীদের গ্রেফতার করছে তাকে অগণতান্ত্রিক এবং বেআইনি বললেন অসম সিভিল সোসাইটির সভাপতি তথা গৌহাটি হাইকোর্টে বিশিষ্ট আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমদ চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, ২০০৬ সালে বাল্য বিবাহ বিরোধী আইন হলেও এর বিধি আজও তৈরি হয়নি। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কি বললেন, না বললেন তাতে আইন হয়ে যায় না।
চৌধুরী সাহেবের কথায়, গত ফেব্রুয়ারিতে যখন বাল্য বিবাহ বিরোধী প্রথম অভিযান শুরু করেছিল অসম পুলিশ, তখনও প্রতিবাদ করেছিলাম। যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের অনেকেই কয়েক বছর আগে বিবাহ করে সংসার করছেন। বাচ্চাকাচ্চা হয়েছে তাঁদের। এখন গ্রেফতার করে কেন সরকার তাদের জীবনযাত্রা লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে? রশিদ সাহেব বলেন, আমরাও বাল্যবিবাহ বিরোধী। এই কুপ্রথা বন্ধ করতে হলে মানুষকে সচেতন করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা যা করছেন, সেটা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের পথ হতে পারে না।
একই সঙ্গে তিনি বলেন, ২০২২-এর ৩০ সেপ্টেম্বর পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট এক নির্দেশে বলেছিল, মুসলিম মেয়েরা সাবালিকা হওয়ার পর শরিয়া আইন অনুযায়ী বিবাহযোগ্য হয়। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে জানায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে চলছে। মানে এটা বিচারাধীন বিষয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গায়ের জোরে আইন বানিয়ে ফেলছেন। এ ক্ষেত্রে পকসো আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। অথচ এই আইন পুরোপুরি আলাদা ক্ষেত্রের জন্য।