বিশেষ প্রতিবেদন: আমেরিকার পুলিশ বাহিনী ও বিচার ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে ‘পদ্ধতিগত’ বা ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ বর্ণবিদ্বেষ। আর এই বর্ণবিদ্বেষ প্রধান শিকার আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গরা তথা কালো মানুষগুলো। রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার পরিষদের নতুন এক প্রতিবেদনে নিজেদের ‘মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন’ দাবি করা আমেরিকার নির্মম বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। সেই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ রুখতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। ‘দ্য ইউএন ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিপেনডেন্স এক্সপার্ট মেকানিজম টু অ্যাডভান্স রেসিয়াল জাস্টিস অ্যান্ড ইকুয়ালিটি ইন দ্য কনটেক্সট অব ল্য ইনফোর্সমেন্ট’-এর গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে আমেরিকা সফরকালে রাষ্ট্রসংঘের বর্ণবাদ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ দলের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি হয়। ওই সফরে দলের সদস্যরা প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের শিকার ১৩৩ জনের সাক্ষাৎকার নেন। তারা কলাম্বিয়া, আটলান্টা, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো, মিনিয়াপলিস ও নিউইয়র্ক- এই ৫ শহরের পাঁচটি বন্দিশিবির পরিদর্শন করেন। শুধু তাই নয়, ওই ৫ শহরের নাগরিক সমাজ, সরকার ও পুলিশ বিভাগের কর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তারা। বিশেষজ্ঞ দলের অন্যতম সদস্য ট্রেসি কিসি বলেছেন, ‘আমরা যেসব শহরে গেছি, সেখানে আমরা কয়েক ডজন হৃদয়বিদারক কাহিনী শুনেছি। তাতে ভুক্তভোগীরা যে ন্যায়বিচার বা প্রতিকার পায় না, সেসব কথাই উঠে এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘এটি নতুন কিছু নয় এবং তবে কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্যও নয়।’ ট্রেসি কিসি আরও বলেন, ‘এটি একটি পদ্ধতিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা যা পদ্ধতিগতভাবেই সমাধান করা দরকার।’ প্রতিবেদনের প্রতিটি পৃষ্ঠায় আমেরিকায় ভয়ঙ্কর বর্ণবাদের চিত্র উঠে এসেছে, যা নির্মম দাসপ্রথা, দাস ব্যবসা ও শত শত বছরের আইনসিদ্ধ বর্ণবাদের উত্তরাধিকারই বহন করে চলেছে। এমনকি দাসপ্রথার বিলুপ্তির ১৫০ বছর পরও জাতিগত নিপীড়ন, পুলিশি হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটছে সেদেশে। প্রতিবেদন বলছে, আমেরিকায় এই বর্ণবাদের সবচেয়ে বড় শিকার বা ভুক্তভোগী আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গরা। শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গদের পুলিশের হাতে নিহত হওয়ার সম্ভাবনা তিনগুণ বেশি। প্রতি বছর পুলিশের হাতে এক হাজারেরও বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মাত্র ১ শতাংশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়। প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, যদি আমেরিকায় শক্তি প্রয়োগের আইন আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সংস্কার করা না হয়, তাহলে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড চলতেই থাকবে। প্রসঙ্গত, বর্ণবাদ এমন একটি বৈষম্যমূলক আচরণ, যা মানুষের মধ্যে বিভাজন ও পার্থক্য তৈরি করে। বর্ণবাদ কখনও শরীরের চামড়ার রং দিয়ে হতে পারে, কখনও আঞ্চলিকতা দিয়ে হতে পারে, কখনও গোত্র দিয়ে হতে পারে, আবার কখনও বর্ণ দিয়েও হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নাগরিকের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে দুটি নীতি অনুসরণ করে। একটি নীতি সাদাদের জন্য, অপরটি কালোদের জন্য।