পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে একজন মুসলিমের পরিধান কেমন হওয়া উচিৎ। সেখানে যেমন মহিলার পোশাকের কথা বর্ণিত হয়েছে তেমনই পুরুষেরও পরিধানের স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। যদিও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বারবার মহিলাদের পোশাকবিধি নিয়েই প্রচার মতান্তরে অপপ্রচার চলে। যা দেখে মনে হয় কেবলমাত্র মুসলিম মহিলাদের বিরুদ্ধেই বুঝি এই পোশাকবিধি দিয়েছে ইসলাম। যা সত্য নয়। শরিয়াহ নিয়ম মেনে এবার পোশাকবিধির ওপর বিল পাশ করল ইরান। যাতে মহিলা ও পুরুষদের জন্য নয়া পোশাকবিধি কার্যকর হয়েছে। উভয়ের জন্য একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে। এই বিল অনুযায়ী, এবার থেকে মেয়েরা অশ্লীল ও আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করতে পারবে না। পাশাপাশি, হিজাব ছাড়া বাইরে চলাফেরা করতে পারবে না মহিলারা। অন্যদিকে পুরুষের ক্ষেত্রেও এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ট্রান্সপারেন্ট পোশাক পরতে পারবে না তারা। এমনকি গোড়ালির ওপর প্যান্ট পরতে হবে। প্রকাশ্যে খোলামেলা পোশাক পরতে পারবে না পুরুষরা।
বুধবার পার্লামেন্টের সদস্যরা ১৫২-৩৪ এ ভোট দিয়ে ‘হিজাব অ্যান্ড চ্যাস্টিটি বিল’ পাশ করেছেন। তবে বিলটি এখনও আইনে পরিণত হয়নি। গার্ডিয়ান কাউন্সিলের (উচ্চতম সংসদ) অনুমোদনের পর বিলটি আইনে পরিণত হবে। প্রভাবশালী এই সংগঠনের সদস্য হয়ে থাকেন খ্যাতনামা আলেম ও আইনবিদরা।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ইরানে মেয়েদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। তবে শুধু হিজাব পরাই নয়, ‘সতীত্ব’ বজায় রাখতে হবে মেয়েদের। চারিত্রিক শুদ্ধতা বজায় না রাখলেই শাস্তি। তবে মাথা যথাযথ ভাবে ঢাকা না হলে তা সর্বোচ্চ অপরাধ গণ্য করা হবে। কোনও সেলেব্রিটি যদি আইন ভাঙেন, তা হলে তাঁর শাস্তি আরও কঠিন। শুধু তাই নয় আইন অমান্যকারীদের ‘কড়া শাস্তি’ প্রদান করার কথা জানানো হয়েছে। ইরানি দণ্ডবিধি অনুসারে, চতুর্থ মাত্রার শাস্তি মানে পাঁচ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১৮ কোটি থেকে ৩৬ কোটি রিয়াল জরিমানা।
ইরানের শরিয়া আইন অনুসারে, বয়ঃসন্ধিকালের ঊর্ধ্বে নারী ও মেয়েদের অবশ্যই হিজাবে চুল ঢেকে রাখতে হবে এবং শরীর ঢাকতে হবে লম্বা, ঢিলেঢালা পোশাকে। কিন্তু, নতুন বিলে প্রকাশ্যে ‘অনুপযুক্ত পোশাক’ পরাকে ‘চতুর্থ মাত্রার’ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
এক বছর আগের কথা। হিজাব-বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল ইরান। তরুণী মাইসা আমিনির মৃত্যুতে কেঁপে উঠেছিল সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ড। পুলিশের বিরুদ্ধে হিজাব না পরার অভিযোগে মাহসার উপরে অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছিল। এই ঘটনাকে সূত্র করেই হিজাব-বিরোধী আন্দোলন শুরু হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে মাইসার ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উঠেছিল যে, পুলিশি অত্যাচারে নয়, শারীরিক অসুস্থতার জন্য মৃত্যু হয়েছিল ওই তরুণীর। মাইসার মৃত্যুর ঘটনায় শুধু ইরান নয়, বিশ্বজুড়ে উঠেছিল সমালোচনার ঝড়। বর্তমানে দেশে হিজাব আন্দোলন স্তিমিত। তবে পোশাকবিধি বিল পাশ করে হিজাব বিরোধী নাগরিকদের কড়া বার্তা দিলেন স্থানীয় প্রশাসন। বিল পেশের মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন ইসলাম ও শরিয়াহর সঙ্গে আপোষ একেবারেই নয়।