পুবের কলম,ওয়েব ডেস্ক: উর্দু অনুরাগীদের অনুভূতিতে আঘাত করল উত্তরাখণ্ড পুলিশ। সম্প্রতি ৭০০ পৃষ্ঠার একটি পুলিশ প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল সম্পাদনা ও প্রকাশ করেছে উত্তরাখণ্ড পুলিশ। ম্যানুয়ালে থাকা প্রায় ১,১০০টি উর্দু শব্দ তুলে সেখানে হিন্দি শব্দ বসানো হয়েছে। যা প্রায় ১৫০ বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। ভারতীয় দণ্ডবিধি, সিআরপিসি এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের অধীন বিভিন্ন মামলার জন্য উর্দু হিন্দি সমতুল্য। উত্তরাখণ্ড পুলিশ প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল অনুযায়ী এখন মামলার রিপোর্ট করা এবং আদালতে আবেদন করার সময় “শুদ্ধ হিন্দি” পরিভাষা ব্যবহার করা হবে।
আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে, ২০ জন পুলিশ অফিসারের একটি দল অধ্যবসায়ের সঙ্গে উর্দু শব্দ শনাক্ত করার জন্য গবেষণা চালায় যা দেড় শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। তারা আপডেট করা প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালটিতে প্রায় ১,১০০টি উর্দু শব্দ তুলে হিন্দি শব্দ প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। কিছু উর্দু শব্দ ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ১৮৬০ সাল থেকে এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইনে ১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত ছিল। এই উর্দু শব্দগুলি পুলিশ অফিসারদের কাছে পরিচিত ছিল।
কিছু উর্দু শব্দ যেগুলিকে জটিল এবং বোঝা কঠিন বলে উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বামুদিয়াত (অভিযোগকারী), তাফসীল (বর্ণনামূলক ঘটনা), নকশা-নাজারি (ঘটনার স্থান) এবং তাজকারা (পুলিশের সাধারণ ডায়েরিতে লেখা বিবরণ)। এই শব্দগুলি পুলিশ অফিসারদের প্রতিদিনের অপারেশনগুলিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
উর্দু নিয়ে সর্বশেষ শোরগোল তৈরি হয়েছিল গত এপ্রিল মাসে। একটি কট্টর দক্ষিণ-পন্থী নিউজ চ্যানেলের একজন রিপোর্টার একটি জনপ্রিয় ফাস্ট ফুডের দোকানে ঢুকে কর্মচারীদের হেনস্থা করা শুরু করলেন, কারণ এই মহিলা সাংবাদিকের মনে হয়েছিল সেই দোকানের খাবারের প্যাকেটের লেবেল উর্দুতে লেখা। পরে দেখা গেল, এই লেবেলের লেখা উর্দুতে নয়, আরবিতে।
ডানপন্থী ও ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুরা উর্দুকে একটা বিদেশি ভাষা বলে মনে করে, যেটি ইসলামীপন্থিরা ভারতের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে বলে তারা বলে থাকে । অনেকেই বলছেন, দেশে এখন কোন কিছুর সঙ্গে ইসলামী সংস্কৃতির কোনো সম্পর্ক থাকলেই সেটিকেও মোটা-দাগে ইসলামিক বলে তকমা লাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে।
গত বছর ভারতের পোশাকের ব্রান্ড ফ্যাবইন্ডিয়া তাদের একটি বিজ্ঞাপন তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিল, কারণ এটির শিরোনাম উর্দুতে ছিল বলে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন। অতীতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য বিধানসভায় নির্বাচিত সদস্যদের উর্দুতে শপথ নেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়; শিল্পীদের উর্দুতে দেওয়াল লিখন বন্ধ করে দেওয়া হয়; অনেক শহর এবং এলাকার নাম বদলে ফেলা হয়। এমনকি স্কুল পাঠ্যবই থেকে উর্দু শব্দ অপসারণের দাবি জানিয়ে আবেদন করা হয়।