বিশেষ প্রতিবেদন: ১৯৫০ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত অন্তত ২০০ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে আফ্রিকা মহাদেশে। বিভিন্ন দেশে গত ৩ বছরে ৮টি সফল সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। পশ্চিম আফ্রিকার নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থানের এক মাস পরই মধ্য আফ্রিকার তেলসমৃদ্ধ দেশ গ্যাবনে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দেয় সেনা। দেশটির রিপাবলিকান গার্ডের প্রধান জেনারেল ওলিগুই এনগুয়েমা নিজেকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন।
সাম্প্রতিক বিতর্কিত নির্বাচনের পর বিজয়ী ঘোষিত প্রেসিডেন্ট আলি বঙ্গোকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে সেনাবাহিনী। এর মাধ্যমে গ্যাবনে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রভাবশালী বঙ্গো পরিবারের শাসনের ইতি ঘটল। নাইজারের মুহাম্মদ বাজুম এবং গ্যাবনে আলি বঙ্গোর পতনের আগে বুরকিনা ফাসোয় ২০২২ সালে দু’টি অভ্যুত্থান হয়। এ সময় গিনি বিসাউ, গাম্বিয়া ও দ্বীপরাষ্ট্র সাওটোমেতেও ব্যর্থ অভ্যুত্থান হয়েছে। ২০২১ সালে আফ্রিকায় মোট ৬টি অভ্যুত্থান চেষ্টার মধ্যে ৪টি সফল হয়।
মার্কিন গবেষক জোনাথন পোয়েল ও ক্লেটন থাইন একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, ১৯৫০ সালের পর আফ্রিকায় ২০০টির মতো অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়েছে যার অর্ধেকই ছিল সফল। ২০১৭ সালে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের ৩৭ বছরের শাসনের অবসান ঘটালেও জেনারেলরা একে অভ্যুত্থান বলেননি। ২০২১ সালের এপ্রিলে চাদের নেতা ইদ্রিস দেবির মৃত্যুর পর তাঁর ছেলেকে শাসনক্ষমতায় বসায় সেনা। এটিকেও অভ্যুত্থান হিসেবে দেখতে রাজি হননি সেনা কর্মকর্তারা। মোটামুটিভাবে আফ্রিকায় ১৯৬০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গড়ে প্রতিবছর চারটি অভ্যুত্থান হয়েছে। এ নিয়ে গবেষক পোয়েল বলেন, ‘ব্যাপারটি মোটেও আশ্চর্যের নয়।
স্বাধীনতার পর থেকেই আফ্রিকার অনেক দেশ অস্থিশীলতা দেখে আসছে। মহাদেশটির দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার মতো অভ্যুত্থানও সাধারণ একটি পরিস্থিতি।’ আফ্রিকায় ২০০০ সালের পর অভ্যুত্থানের ঘটনা বেশ কম দেখা গেলেও গত দুই বছরে সামরিক শাসনের প্রবণতা বেড়েছে। ২০২০-তে একমাত্র মালিতেই অভ্যুত্থান হয়। ২০২১ সালে অভ্যুত্থান হয় চাদ, মালি, গিনি, সুদান ও নাইজারে। ২০২২ সালে পাঁচটি অভ্যুত্থান চেষ্টা হয়,যার মধ্যে বুরকিনা ফাসোয় দু’টি সফল হয়। সেখানে এ পর্যন্ত ৯টি অভ্যুত্থানের মধ্যে মাত্র একটি ব্যর্থ হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কাওয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এনদুবুইসি ক্রিশ্চিয়ান বলেন, দীর্ঘকাল ধরে শাসনক্ষমতায় থাকা একনায়কদের বিরুদ্ধে গণজাগরণই অভ্যুত্থানের সুযোগ করে দেয়। সুদানে সবচেয়ে বেশি ১৭ বার অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়, যার মধ্যে ছয়টি সফল। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির গণবিক্ষোভের মুখে পড়লে তিনি শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত হন। বশিরও ১৯৮৯ সালে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন। আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ তেলসমৃদ্ধ নাইজেরিয়াও সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য বেশ পরিচিত ছিল।
১৯৬৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত আটটি অভ্যুত্থান হয় দেশটিতে। ১৯৯৩ সালে জেনারেল সানি আবাচা সেনাশাসন জারির পর ক্ষমতায় থাকেন ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত। এরপর থেকে অবশ্য সেখানে সেনা হস্তক্ষেপের ঘটনা দেখা যায়নি। বুরুন্ডিতে হুতু ও তুতসি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদের জেরে প্রায় ১১টির মতো অভ্যুত্থান হয়। সিয়েরা লিওনে ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত তিনটি, ১৯৭১ সালে একটি এবং ১৯৯২ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ৫টি অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়। ঘানায় প্রথম অভ্যুত্থান হয় ১৯৬৬ সালে। দেশটিতে দুই দশকের বেশি সময়ে মোট ৮টি অভ্যুত্থান হয়।
উল্লেখ্য, আফ্রিকা মহাদেশ বিশ্বের অন্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি সামরিক অভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করেছে। ২০১৭ সালের পর বিশ্বব্যাপী ১৮টি অভ্যুত্থান হয়। মায়ানমারের ২০২১ সালের ঘটনা ছাড়া বাকি ১৭টিই ঘটেছে আফ্রিকা মহাদেশে।