পারিজাত মোল্লা: শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহার সিঙ্গেল বেঞ্চে এক প্রিসাইডিং অফিসারের হলফনামায় বিস্ফোরক তথ্য উঠে এল। মুর্শিদাবাদের একটি ব্লকে ছাপ্পা ভোট হওয়ার অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এক বাম প্রার্থী। গত শুনানি পর্বে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কর্তব্যরত প্রিসাইডিং অফিসারের হলফনামা তলব করেছিলেন।
এদিন হলফনামা জমা পড়ে। সেখানে উল্লেখ রয়েছে “বুথ দখল হওয়ার পরে দেদার ছাপ্পা চললেও প্রাণ ভয়ে কিছু করতে পারিনি ।”
হাইকোর্টে বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি প্রিসাইডিং অফিসারের।হলফনামা দিয়ে তা স্বীকার করে নিলেন পঞ্চায়েত ভোটে নিযুক্ত এক প্রিসাইডিং অফিসার। এর জেরে এবার মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা-২ ব্লকে ফের পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। গত ৮ জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়।
ভোট গণনা হয় ১১ জুলাই।বেলডাঙা-২ ব্লকের কাশীপুর গ্রামপঞ্চায়েতের ছাপ্পা ও রিগিংয়ের অভিযোগে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সিপিএম প্রার্থী নাসিমা বেগম। মামলাকারীর অভিযোগ,-‘ তাঁর এজেন্টদের পঞ্চায়েত ভোটের দিন এবং ভোট গণনার দিন মারধর করে ভোটকেন্দ্র ও গণনাকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল’ ।
এই ঘটনার পরও বুথে পুনর্নির্বাচন হয়নি। পরে সেখান থেকে ব্যালট পেপার উদ্ধার হয়। এই মামলায় জানানো হয়েছিল, কাশীপুর প্রাইমারি স্কুলের বুথে প্রিসাইডিং অফিসার ছিলেন সুমিত পাণ্ডে। তাই তাঁর কাছে ঘটনার দিন কী হয়েছিল? তা জানতে চেয়ে হলফনামা তলব করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা ।সেই হলফনামাতে ভোটের দিনের হাড়হিম করা অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক সুমিত পাণ্ডে। তিনি ওই বুথে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত ভোটের দিন সাড়ে ১২ টার সময় দুষ্কৃতীরা ভোটকেন্দ্রে জবরদস্তি ঢুকে পড়ে বুথের দখল নেয়। তারপর ব্যালট পেপার ছিনতাই করে দেদার ছাপ্পা শুরু করে। সিসিটিভি ভেঙে দেয়। এমনকী ওই দুষ্কৃতীরা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ভোটকর্মীদের প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছিল। দুষ্কৃতীরা তাদের কথা মেনে কাজ করতে বলে’ ।
প্রিসাইডিং অফিসার সুমিত পাণ্ডে আরও জানিয়েছেন, -‘তাঁর এবং অন্য পোলিং অফিসারদের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এর ফলে তাঁরা সেক্টর অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। এমনকী ভোট শেষে ব্যালট বাক্স সিল করে ডায়েরিতে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে লিখতে বাধ্য করে ওই দুষ্কৃতীরা’ । হলফনামায় পরিষ্কার উল্লেখ করেছেন প্রিসাইডিং অফিসার সুমিত পাণ্ডে। এই হলফনামায় রাজ্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্য এনে দিয়েছে।