পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় বংশোদ্ভূত গোয়েন্দা এবং টিপু সুলতানের বংশধর নূর ইনায়েত খানের প্রতিকৃতি উন্মোচন করলেন ব্রিটিশ রানী ক্যামিলা। লন্ডনের রয়্যাল এয়ার ফোর্স (আরএএফ) ক্লাবে রাজকীয় অনুষ্ঠানে রানী ক্যামিলা ক্লাব কক্ষটির নাম দেন ‘নূর ইনায়েত খান রুম’। প্রতিকৃতি উন্মোচনের আগে তিনি নূর ইনায়েত খানের খুড়তুতো ভাই শেখ মেহমুদের সঙ্গে দেখা করেন।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখিকা শ্রাবণী বসু বলেন, আরএফএফ ক্লাবে নূর ইনায়েত খানের প্রতিকৃতি উন্মোচন খুবই গর্বের মুহূর্ত। নূর ইনায়েত খানের প্রতিকৃতি উন্মোচনের পর তাঁর লেখা নূরের জীবনী ‘দ্য স্পাই প্রিন্সেস – দ্য লাইফ অফ নূর ইনায়েত খান’ শিরোনামে একটি বই উপহার দেওয়া হয় রানী ক্যামিলাকে। ১৯১৪ সালের ১ জানুয়ারি মস্কোর ক্রেমলিন শহর সংলগ্ন একটি মঠে সুফি প্রচারক হযরত ইনায়েত খান এবং আমেরিকান মা ওরা রে বেকারের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৪৩ সালে উইমেনস অক্সিলিয়ারি এয়ার ফোর্স (ডব্লিউএএএফ) থেকে ব্রিটেনের স্পেশাল অপারেশন এক্সিকিউটিভ (এসআই) -তে নিয়োগ করা হয় নূর খানকে। এসআই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অধিকৃত দেশে গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেছিল।
তিনি ফ্রান্সে অনুপ্রবেশকারী প্রথম মহিলা এসআই অপারেটর ছিলেন। ১৬ জুন, ১৯৪৩ সালে একটি লাইসান্ডার বিমানের মাধ্যমে তাঁকে সেখানে নামানো হয়েছিল। আরএএফ একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘পরের সপ্তাহে গেস্টাপো প্যারিস প্রতিরোধ গোষ্ঠীর বেশিরভাগ সদস্যকে গ্রেফতার করেছিল, ওই গোষ্ঠীতেই নূর ইনায়েতও কাজ করতেন।
বিপদ আছে জেনেও, নূর ইংল্যান্ড ফিরে যেতে অস্বীকার করেন। তিনি তাঁর ফরাসি সহকর্মীদের সঙ্গে কথা না বলে ফ্রান্স থেকে যেতে চাইছিলেন না। বিবৃতি অনুসারে, গেস্টাপোর কাছে নূর সম্পর্কে সমস্ত তথ্য ছিল। নূরকে তারা কেবল ‘ম্যাডেলিন’নামেই চিনত। ১৯৪৩ সালে অক্টোবরে ফের নূরকে গ্রেফতার করা হয়।
কড়া জিজ্ঞাসাবাদের পরও তিনি তাঁর কাজ ও সহকর্মীদের বিষয়ে কোনওরকম তথ্য দিতে অস্বীকার করেন। মুখ খুলতে না চাওয়ায় তাঁকে গ্রেফতার করে জার্মানিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আরএএএফ তাদের বিবৃতিতে জানায়, ‘তাঁকে দাচাউ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানে তাঁর সঙ্গে নির্মম আচরণ করা হয়েছিল, তারপর কবরস্থানে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
নূর সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল। জর্জ ক্রস (জিসি)-র পক্ষ থেকে সম্মানিত ডব্লিউএএএফ-এর মাত্র দুজন সদস্যের একজন ছিলেন নূর। ভিক্টোরিয়া ক্রসের পাশাপাশি, জিসি হল এমন একটা সর্বোচ্চ পুরষ্কার যা বীরত্বের প্রদর্শন বা চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অদম্য সাহসের জন্য দেওয়া হয়।