পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: তিন মাসের বেশি সময় ধরে মণিপুরে চলছে মেইতেই-কুকি জাতিদাঙ্গা। সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইরা সংখ্যালঘু খ্রিস্টান কুকিদের উপর একপ্রকার নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। ৩ মে-র পর থেকে ১৫০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই হিংসায়। রাজ্যের তিনটি সরকারি হাসপাতালে ৫৭টি লাশ এখনও বেওয়ারিশ হয়ে পড়ে আছে। ইম্ফলের হাসপাতালে ৩০টি লাশ পড়ে রয়েছে যেগুলি কুকিদের বলে জানা গিয়েছে। লাশগুলি মর্গেই পড়ে রয়েছে। মেইতেই-অধ্যুষিত এলাকায় কুকিরা ঢুকতে পারছে না বলেই লাশগুলি পড়ে রয়েছে, এমনটাই জানাচ্ছেন ইম্ফল পূর্বের জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের প্রধান ডা. বাপিন কুমার। লাশগুলি শনাক্ত করার জন্য কোনও আইডি কার্ডও নেই। বাধ্য হয়ে মৃতদেহগুলির ডিএনএ সংরক্ষণ করা রাখা হচ্ছে। ইম্ফল থেকে চুড়াচাঁদপুর পর্যন্ত রাস্তা ‘ওয়ার জোন’ হয়ে উঠেছে। মেইতেই ও কুকিদের এলাকার মাঝখানে রয়েছে আর্মি ও প্যারামিলিটারিদের টহলদারি।
হাসপাতালের অফিসিয়ালরা জানাচ্ছেন, এখানে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তাই এক জায়গায় জমা করে রাখা হচ্ছে লাশ। চুড়াচাঁদপুরের জেলা হাসপাতালের মর্গে রয়েছে ৩৮টি লাশ। এর মধ্যে ৪টি মেইতেইদের লাশ বলে জানা গিয়েছে। বাকিগুলি কুকিদের। কুকিদের ৩৪টি লাশ মর্গেই পড়ে রয়েছে। তাদেরকে একটি গণকবরে দাফন করার কথা হয়েছিল। কিন্তু মেইতেইরা সেটা করতে দেয়নি। এ নিয়ে নতুন করে অশান্তিও ছড়িয়েছে এলাকায়। হাসপাতালের কোল্ড স্টোরেজে মাত্র ১২টি লাশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে বাকি লাশ পচছে। ব্যাপক দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। কুমড়োর জুস দিয়ে মৃতদেহ সংরক্ষণ করার ট্র্যাডিশন রয়েছে মণিপুরে। ফর্ম্যালডিহাইড ও মিষ্টি কুমড়োর জুস দিয়ে মৃতদেহগুলি ফেলে রাখা হয়েছে। কুকিরা জানিয়েছিল, কুকি ও মেইতেইদের এলাকার মাঝে ‘বাফার’ জোনে তারা এদের গণকবর দেবে। তাতে ঘোর আপত্তি তোলে মেইতেইরা। তা নিয়ে দু-পক্ষের মধ্যে রেষারেষি প্রবল হয়ে উঠেছিল। মণিপুর হাইকোর্ট ‘স্ট্যাটাস কুয়ো’ বা স্থিতাবস্থা জারি করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও জানিয়েছেন, ওই এলাকায় গণকবর দেওয়া যাবে না। ফলে কুকিদের লাশ এখন পচে পচে কঙ্কালে পরিণত হতে চলেছে।
প্রসঙ্গত, মণিপুর হাইকোর্ট রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি হিসাবে গণ্য করার পক্ষে রায় দিয়েছিল। এতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ অর্থাৎ কুকিরা নিজেদের অধিকার হরণের আশঙ্কা করে। ৩ মে এক মিছিল ও প্রতিবাদ থেকে শুরু হয় দু-পক্ষের সংঘর্ষ, যা তিনমাস ধরে বিক্ষিপ্ত ভাবে চলছে। তবে বিবাদের সেটাই একমাত্র কারণ নয়। অসমে বোড়োল্যান্ডের মতো কুকিরাও স্বশাসিত এলাকা দাবি করে আসছে দীর্ঘদিন। সেই দাবিও মানা হচ্ছে না। বিস্তৃত পাহাড়ি বনভূমি থেকে কুকিদের উচ্ছেদ করে তা কর্পোরেট গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।