পারিজাত মোল্লা: পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন অবধি শয়ে শয়ে মামলা দাখিল হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে। মঙ্গলবার এই ধরনের মামলার শুনানি চলে কলকাতা হাইকোর্টে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উত্তর কুসুম গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হওয়ার কথা আগামী ১০ অগস্ট। তার আগে এখানে জয়ী বিরোধী প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উত্তর কুসুম গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হওয়ার দিন পড়েছে আগামী ১০ অগস্ট। জোট বেঁধে এই বোর্ড গঠন করার প্রস্তুতি নিয়েছে কংগ্রেস ও বামেরা। তার আগে, এখানকার জয়ী কংগ্রেস, বাম ও আইএসএফ প্রার্থীদের উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। মঙ্গলবার ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত।
ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার উস্তি থানার অন্তর্গত উত্তর কুসুম গ্রাম পঞ্চায়েত। এই পঞ্চায়েতে মোট ২৫ টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস, বাম ও আইএসএফ জোট ১৭ টি আসন পেয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস বাকি ৮ টি আসনে জেতে। এই পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের আগে নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টের দারস্থ হন কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থী মস্কিনা মমতাজ।
মমতাজ দাবি করেন, ১০ অগস্ট বোর্ড গঠনের দিন নির্ধারিত। কিন্তু তার আগে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা ও পুলিশ বিরোধী জয়ী প্রার্থীদের হুমকি দিচ্ছে। বোর্ড গঠনের দিন পঞ্চায়েত কার্যালয়ে তাঁদের অনুপস্থিত থাকতে বলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক আবুল বাশার লস্করের স্ত্রী এবারের কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থী মস্কিনা মমতাজ। বিরোধীদের বোর্ড গঠন হলে তাঁরই প্রধান নির্বাচিত হওয়ার কথা।
মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর নির্দেশ, ডায়মন্ড হারবারে পুলিশ সুপারকে ভোট গঠনের দিন পঞ্চায়েত কার্যালয়ে উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। বোর্ড গঠনের দিন জয়ী প্রার্থীরা যাতে বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে পারে সে বিষয়টি পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে। গত সোমবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে বোর্ড গঠনের আগে নিরাপত্তা দানের আর্জি জানায়। পাশাপাশি, বিচারপতি ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশকে। যাতে বিরোধী দলের বিজয়ী প্রার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের আগে উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা দেওয়া হয় সেই বিষয়ে।
এছাড়াও, নন্দীগ্রামের দুটি ব্লকের ১৭টি পঞ্চায়েতের বিজয়ী প্রার্থীরা বোর্ড গঠনে যাতে হাজির থাকতে পারেন সেই বিষয়েও পুলিশকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এছাড়াও, রানাঘাট ১ ব্লক, হবিবপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ বিভিন্ন জেলায় একইভাবে বোর্ড গঠনে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস আবার কোথাও নির্দল জয়ী প্রার্থীকে বোর্ড গঠনে অংশ নেওয়া ঠেকাতে দুষ্কৃতীরা বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় পুলিশি নিরাপত্তায় বোর্ড গঠন, আবার কোথাও বোর্ড গঠনে পর্যাপ্ত পুলিশ নিরাপত্তা দেওয়ার দাবিতে একাধিক মামলার আবেদন সোমবার গ্রহণ করে থাকে আদালত। এদিন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এদের প্রত্যেককে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সব মামলার ভিত্তিতে একাধিক জায়গায় বিজয়ী প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
মথুরাপুর, মুর্শিদাবাদ ও রায়দীঘীর বিরোধী দলের বিজয়ী প্রার্থীদের পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী ১০ অগস্ট বোর্ড গঠন হবে মথুরাপুর পঞ্চায়েতে। তার আগে মঙ্গলবার ৯ বিজয়ী প্রার্থীকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। মুর্শিদাবাদের তেনকরাইপুর বালুমতি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫ জন প্রার্থী ও ওই জেলার হেরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের ১২ জন জয়ী প্রার্থীকেও নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। সিপিএমের জয়ী প্রার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি অপহরণের অভিযোগের তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। ওই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হবে ১১ অগস্ট। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দীঘীর কাশিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭ জন জয়ী বিরোধী প্রার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে নন্দীগ্রামেও। বোর্ড গঠনের দিন এগোতেই বিজয়ী প্রার্থীদের এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। মামলাকারীদের বক্তব্য, নন্দীগ্রামের দুটি ব্লকের ১৭ টি পঞ্চায়েতের বিজয়ী প্রার্থীদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। এখন দেখার রাজ্য পুলিশ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ কে কতটা কার্যকর করে?