বিশেষ প্রতিবেদক: মণিপুরের কুকি জনজাতির লোকদের মতো পরিণাম হতে চলেছে মিজোরামের ব্রু অর্থাৎ রিয়াং জনজাতির মানুষদের। মিজোরামের ভোটার তালিকা থেকে ৬ হাজারের বেশি ব্রু জনজাতির ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
২০২০ সালে ব্রুদের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির পর ত্রিপুরায় বসতি স্থাপনের জন্য তাদের নাম রাজ্যের ভোটার তালিকা থেকে কেটে দেওয়া হলো। যদিও শরণার্থী হওয়ার জন্য ত্রিপুরার ভোটার তালিকায়ও তাদের নাম স্থান পায়নি।
মিজোরাম রাজ্য নির্বাচন দফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজ্যের তিন চেলা, মামিত, কলাশিব এবং লুংলেইর ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের ছয় হাজারের বেশি ব্রু জনজাতির ভোটারদের নাম ছাঁটাই করা হল।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের অক্টোবর মাসে মিজোরামের মামিত জেলার দুয়াপায় মিজো বনরক্ষীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ব্রু উগ্রবাদীরা। এরপর থেকে মিজোরামে জিয়াংদের উপর অত্যাচার শুরু হয়।
বহু ব্রু গ্রাম মিজোদের হিংসার আগুন ছাই হয়ে গিয়েছিল। এখন আত্মরক্ষায় ভিটেমাটি ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মিজোরামের ব্রু জনগোষ্ঠি ত্রিপুরায় আশ্রয় নিতে শুরু করে। মিজোরামের মামিত, কলাশিব এবং লুংলেই জেলা থেকে হাজার হাজার ব্রু রিয়াং শরণার্থী ত্রিপুরার কাঞ্চনপুর এবং পামিসাগরে অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নেন।
মানবিকতার খাতিরে ত্রিপুরা সরকার মিজোরামের ব্রু জনজাতির লোকদের আশ্রয় দেয়। এখন ত্রিপুরায় আশ্রয় ৫,৪০০ রিয়াং পরিবারের প্রায় ৩৪ হাজার সদস্য। সেই সময় যারা ছোট ছিল, তাদের অনেকেই এখন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও ত্রিপুরার ভোটার তালিকায় নাম ওঠেনি।
অন্যদিকে, রিয়াংরা আজ মিজোরামে ফিরে যেতে রাজি নয় বলে তারা কেন্দ্রের কাছে সাহায্যের আবেদন করে। অবশেষে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি দিল্লিতে দুই রাজ্যের সরকার আর কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়।
সেখানে ঠিক হয়, রিয়াংদের পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্র ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করবে। পরিবার পিছু এককালীন ৪ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করে দেওয়া হবে যা দু’বছর পর নগদে পাওয়া যাবে।
এছাড়া দু’বছর যাবৎ প্রতি পরিবারকে নিঃশুল্ক রেশন ও মাসিক ৫০০০ টাকা করে দেওয়া হবে। এছাড়া ত্রিপুরা সরকার প্রতিটি পরিবারকে দেড় কাটা জমির উপর দেড় লক্ষ টাকা ব্যয়ে ঘর বাড়িয়ে দেবে। যদিও কেবল রেশন ছাড়া রিয়াংদের ভাগ্যে এখনও কিছু জোটেন।