পারিজাত মোল্লাঃ শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে উঠে আনিসুর রহমানের প্যারোলে মুক্তি সংক্রান্ত মামলা। কয়েকদিন আগে কারা দপ্তরের পরামর্শে নিম্ন আদালতে প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু শুক্রবার ফের জেলে যেতে হচ্ছে।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে প্যারোল খারিজ হয়ে গেল পাশকুড়ার কুরবান শাহ খুনে অভিযুক্ত আনিসুর রহমানের । শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এই মামলার শুনানি পর্বে জানান , -‘অবিলম্বে আনিসুরকে জেলে ফিরতে হবে’। গত বৃহস্পতিবারই আনিসুরের প্যারোল মামলায় হাইকোর্টের সমালোচনার মুখে পরে কারা দফতর ।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এর প্রশ্ন, -‘পঞ্চায়েত ভোটের মুখে কীভাবে আনিসুরকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হল’ ?শুক্রবারই আনিসুরের প্যারোল সরাসরি খারিজ করে তাকে জেলে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত । নির্দেশে মোট তিনটি বিষয় স্পষ্ট করেন বিচারপতি ।
প্রথমত প্যারোল খারিজ করে তাকে জেলে ফেরত পাঠাতে হবে ।
দ্বিতীয়ত, ট্রায়াল শেষ না-হওয়া পর্যন্ত সাক্ষীকে নিরাপত্তা দিতে হবে ধারাবাহিকভাবে ।
তৃতীয়ত, সাক্ষীর নিরাপত্তায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ দ্রুত কার্যকর করতে হবে।
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে কুরবান শাহ হত্যাকাণ্ড-সহ মোট ৩৬ টি মামলায় অভিযুক্ত আনিসুরকে ৪ জুলাই থেকে ৯ জুলাই প্যারোলে মুক্তির নির্দেশ দেয় নিম্ন আদালত । সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় নিহত কুরবান শাহের পরিবার ।গত বৃহস্পতিবার সেই মামলার পর্যবেক্ষণের সময়ই বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের কড়া সমালোচনার মুখে পরে রাজ্য কারা দফতর ।
বিচারপতি জানতে চেয়েছিলেন , -‘কীভাবে এই প্যারোলের অনুমোদন দিল কারা দফতর ?’ বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না-করে শুক্রবার ঠিক পঞ্চায়েত ভোটের আগের দিন আনিসুরের প্যারোল খারিজ করে তাকে পুনরায় জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত ।
এই মামলা হাইকোর্টে ওঠার পরই বিচারপতি সেনগুপ্ত গত বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছিলেন, -‘আপাতত আনিসুর বাড়ি থেকে বাইরে গেলে তার ভিডিয়োগ্রাফি করতে হবে’। কারা দফতর হাইকোর্ট কে জানিয়েছিল, -‘আনিসুরের মা অসুস্থ তাই সে মাকে দেখতে বাড়ি ফিরতে চায় বলেই নিম্ন আদালত তার প্যারোল মঞ্জুর করা হয়’ । গত ৪ জুলাই পাঁশকুড়ায় নিজের বাড়ি চলেও যান আনিসুর ।
উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালে কুরবান শাহকে খুন করা হয়। প্রথমে কুরবানের দাদা আফজাল শাহ মামলা করলেও পরে তাঁকে ভয় দেখানোয় তিনি মামলা প্রত্যাহার করেন বলে অভিযোগ। পরে মৃতের ভাগ্নে জহর শাহ মামলা করেন।কলকাতা হাইকোর্টে মোট পাঁচবার এবং সুপ্রিম কোর্টে একবার আনিসুরের জামিনের আবেদন খারিজ হয়।
একাধিকবার কুরবান শাহের পরিবার দাবি করে, -‘আনিসুরকে মদত দিচ্ছে রাজ্য সরকার’ । কলকাতা হাইকোর্টে জামিনের আর্জি খারিজ হলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আনিসুর । সুপ্রিম কোর্ট সিটি সেশন কোর্টের প্রধান বিচারক এই ট্রায়াল মামলার বিচারের নির্দেশ দেয় । তারপরেও আইজি (কারা) অনুমতি আসায় আনিসুরকে প্যারোলে ছেড়ে দেওয়া হয় ।
কীভাবে পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেল হেফাজতে থাকা আনিসুরকে ছাড়া হল? সেই প্রশ্নকে সামনে রেখেই মামলার দ্রুত পর্যবেক্ষণ করেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত । শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত খারিজ করেন আনিসুরের প্যারোল।