পারিজাত মোল্লা: চলতি পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে একের পর এক নজিরবিহীন নির্দেশ জারি করছে কলকাতা হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চ।তার মধ্যে অন্যতম প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। বুধবার ৮২৫ কোম্পানির চেয়ে বেশি বাহিনী দিয়ে এবছর পঞ্চায়েত ভোট করানোর নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট এর প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত জানিয়েছে -‘ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব জেলায় পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েনের জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে’।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে এদিন এজলাসে জানান , -‘নির্দেশ না মানতে পারল ছেড়ে দিন।আমাদের উপরে ছেড়ে দিন। আমরা সবটাই দেখে নিচ্ছি। দরকার হলে রাজ্যপাল নতুন কমিশনার নিয়োগ করবেন’। গত ২০১৩ সালে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে।
রাজ্যের তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করে তিনি তাঁর লড়াইকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে সেবার (২০১৩) রাজ্য নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত ভোট করেছিল। যদিও তার পরেও সেই ভোটে সন্ত্রাস ঠেকানো যায়নি। এবার সম্পূর্ণ উলট পুরাণ ঘটল। রাজ্য নির্বাচন কমিশনই প্রথম থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী বিরোধিতা করে এসেছে। শেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো মাত্র ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে মুখরক্ষা করতে চেয়ে ছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
কিন্তুমুখ রক্ষা তো হলই না, উল্টে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে আরও মুখ পুড়ল রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
বুধবার যে ভাষায় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে ভর্ত্সনা করেছেন, তা এক কথায় নজিরবিহীন। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, -‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিশনকে সব জেলায় পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েনের জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করতে হবে। ২০১৩ সালের থেকেও বেশি পরিমান বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে হবে।
কেননা বর্তমানে রাজ্যে জেলার সংখ্যা বেড়েছে’। গত ১৫ জুন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করানোর নির্দেশ দেয়। বলা হয়েছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমিশনকে কেন্দ্রের কাছে বাহিনী চাইতে হবে। কিন্তু সেই সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন কমিশন কোনও আবেদন না করায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেন।
সেই মামলার শুনানিতে এদিন প্রধান বিচারপতি এজলাসে জানান , কমিশন কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ কে মান্যতা দেয়নি। ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পর্যাপ্ত নয় বলেই আমাদের প্রাথমিক মতামত। পরিস্থিতি মূল্যায়নের কাজ সততা এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে করা হবে বলে আদালতের আশা। মূলায়নের দায়িত্ব কমিশনের ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু তারা অযথা বিষয়টি দীর্ঘায়িত তাই সব জেলায় বাহিনী মোতায়েন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়’। আদালত আরও জানায়, -‘ ২০১৩ সালে এই কমিশনই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জনব্য সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছিল। আমরা বুঝতে পারছি না, কমিশনের স্বাতন্ত্রের কী হল’? কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির আরও বলেন , -‘ রাজ্য নির্বাচন কমিশন সক্রিয় নয়। তাই আদালতের নির্দেশ মানতে উত্সাহ দেখাচ্ছে না তারা। সেই নির্দেশ কার্যকর না করা সমস্ত পদক্ষেপ করছে কমিশন। আমরা মনে করেছিলাম, এই আদালত অবমাননার মামলা প্রত্যাহার হয়ে যাবে। যাই হোক, আমাদের উপর ছেড়ে দিন, আমরা সবটা দেখে নেব’। এখন দেখার রাজ্য নির্বাচন কমিশন পুনরায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় কিনা?