সেখ কুতুবউদ্দিন: এক অনন্ত আকাশ। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা যেখানে অসীম। সব তারা, সব গ্রহ, সব রঙ মিলিত হয়ে যা কালো অথবা নীল। ঠিক যেন ‘অশেষ তোমার শেষ যে না পাই! এই মহাকালে প্রাণের কোথায় শুরু, কোথায় শেষ তা অজানা আজও। সেই মহাকাশেই তথ্যের ফুল ফুটিয়ে তুলতে নতুন নতুন তথ্য উদঘাটনে চেষ্টায় বিজ্ঞানীরা।
উল্লেখ্য, মহাকাশে এক ধরনের বৃহৎ আকৃতির তারকা বিদ্যমান, যেগুলি স্বয়ং বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ, উপগ্রহ ও তারকার সমষ্টি। কুরআনেরও মহাকাশের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। কুরআনের ভাষায়, এগুলি ‘বুরুজ’ তথা ‘গ্যালাক্সি’ নামে পরিচিত।
মহাকাশ সম্পর্কে আরও জানতে এবং মানুষকে জানাতে গবেষণার উদ্দেশ্যে বিদেশে পারি দিচ্ছেন সদ্য রাজ্য জয়েন্টে প্রথম এবং সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইআইটির ভর্তির প্রবেশিকায় (জেইই-অ্যাডভান্স)- রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় সাহিল আ’তার। তাঁর সর্বভারতীয় র্যঙ্ক ৯৯।
সাহিল গতানুগতিক জীবনের সঙ্গে থেমে থাকতে রাজি নয়। অন্যদের থেকে একটু আলাদা করে নিজেকে তুলে ধরতে চায় সাহিল। তাই সারাবিশ্বের মানুষকে নিজের গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু উপহার দিতে চায়।
রবিবার প্রকাশিত হয়েছে ‘জেইই অ্যাডভান্স’-এর ফল। এদিন ফল প্রকাশের সময় কত Rank পাবে, এই নিয়ে একদম চিন্তিত ছিল না কসবার বোসপুকুর রোডের আশিয়ানা অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা সাহিল।
দ্বিতীয় শ্রেণি থেকেই কলকাতার রুবি পার্কের দিল্লি পাবলিক স্কুলের ছাত্র সে। দ্বাদশ শ্রেণিতে তাঁর নম্বর ছিল ৯৬ শতাংশ। মাধ্যমিকে ৯৮ শতাংশ। তাঁর এখন ইচ্ছা, ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’ নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানী হওয়া।
বরাবরই মেধাবী ছাত্র ছিল শাহিল। রুবি পার্ক স্কুল ও কোচিংয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও সাহিলকে নিয়ে কোনও দিন চিন্তিত ছিলেন না।
দূর আকাশের গ্রহ, তারা, নক্ষত্র নিয়ে ভাবনা আগে থেকেই ছিল বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়া সাহিলের। পড়াশোনার পাশাপাশি ইউটিউব ঘেঁটে মহাকাশের বিষয়গুলি জানার চেষ্টা ছিল তাঁর দৈনন্দিন কাজ। আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে (এমআইটি) ভর্তি হয়ে উচ্চশিক্ষার পাঠ নেবে সাহিল। সেখানে ভর্তির প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে সাহিল।
এই সাফল্য প্রসঙ্গে ‘পুবের কলম’কে সাহিল জানিয়েছে, ‘প্রতিদিন মোটামুটি ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছি। তবে মাঝেমধ্যে একঘেয়েমি লাগত। তাই পড়ার ফাঁকে কিবোর্ড বাজিয়ে গানের রেওয়াজ করেছি। পাশাপাশি বই পড়ার অভ্যাস রয়েছে। মহাকাশ গবেষণার বইগুলিই আমাকে বেশি টানে।
’আগামীতে যারা ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে চায়, তাঁদের উদ্দেশ্যে সাহিলের বক্তব্য, ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা ডাক্তারি কিংবা অন্য কিছু নিয়ে পড়তে চাইলে কেন পড়বো, বিষয়টি পরিস্কার থাকা দরকার। তাহলে সেই বিষয়ে সাফল্য আসবেই।
সাহিলের কথায়, ‘এই ফলাফলে অবশ্যই আমি অত্যন্ত খুশি। খুব ভালো লাগছে। এক দুই বছর ধরে যে পরিশ্রম করে এসেছি, তারই ফল পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বা রাজ্য জয়েন্টের জন্য আলাদা করে কোনও প্রস্তুতি নিইনি।
এদিকে অল ইন্ডিয়া জয়েন্ট এন্ট্রান্সের (জেইই মেইন)-এর ফল-এও তার Rank ২৬১। পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের মেধাতালিকাতেও সর্বশীর্ষ স্থান অধিকার করেছে সাহিল।
সাহিলের বড় ভাই দিল্লি আইআইটির ছাত্র, আব্বা সামিম আখতার সিজিএসটি অফিসার, মা রাবিয়া খাতুন গৃহবধূ। উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবার। সাহিলের এই ফলে খুশি বলে পুবের কলমকে জানান তার আব্বা ও মা।
জেইই অ্যাডভান্সের ফলে রাজ্যের মধ্যে তৃতীয় এবং সর্বভারতীয় তালিকায় ২৩৯ Rank অধিকার করেছে রুবি পারক স্কুলের ছাত্র সোহম দাস। লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা সোহম হতে চায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। আইআইটিতেই ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার। পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট বোর্ডের ফলে সোহমের Rank ছিল দ্বিতীয়। সোহমের বাবা ডা. শুদ্ধসত্ত্ব দাস একজন কার্ডিওলজিস্ট।
এদিকে, জেইই অ্যাডভান্সড পরীক্ষায় সর্বভারতীয় ফলাফলে ৩৬০ নম্বরের মধ্যে ৩৪১ নম্বর পেয়ে দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছে আইআইটি হায়দ্রাবাদ জোনের ভাভিলালা চিদবিলাস রেড্ডি। পরীক্ষার ১৪ দিনের মাথায় প্রকাশিত হয়েছে জেইই অ্যাডভান্সড পরীক্ষার ফল।
অন্যদিকে, মেয়েদের মধ্যে টপার হয়েছে ওই একই জোনের নয়কান্তি নাগা ভাব্য। ২৯৮ নম্বর পেয়ে তার সর্বভারতীয় Rank হল ৫৬। এবছর জেইই অ্যাডভান্স পরীক্ষা দিয়েছে মোট ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৩৭২ জন পড়ুয়া। যার মধ্যে পাশ করেছে ৪৩ হাজার ৭৭৩ জন। এবছর জেইই অ্যাডভান্সড পরীক্ষার মোট নম্বর ছিল ৩৬০।
যার মধ্যে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং অঙ্ক তিনটি বিষয়েই ছিল ১২০ নম্বর। অন্যদিকে, সার্বিকভাবে এবারের কাট অফ নম্বর হল ২৩.৮৯ শতাংশ এবং দুটি পেপার মিলিয়ে বিষয় অনুযায়ী কাট নম্বর ৬.৮৩ শতাংশ।
জেইই অ্যাডভান্সড পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আসনের জন্য জেওএসএএ কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে। সোমবার, ১৯ জুন থেকে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে শুরু হবে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া। গত ৪ জুন আইআইটি, আইআইএসইআর, আইআইএসসি-তে স্নাতকের কোর্সে ভর্তির জন্য হয়েছিল প্রবেশিকা পরীক্ষা।