পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: সিয়ামের একমাসকালীন প্রশিক্ষণমূলক অবদান অত্যন্ত সূক্ষ্ম, ব্যাপক ও গভীর। সিয়াম মানব মনের যাবতীয় কুপ্রবৃত্তির উপর শক্ত লাগাম লাগিয়ে দেয় এবং রোযাদারকে যাবতীয় নাফরমানির কাজকর্ম থেকে বিরত রাখে। অপরাধ যে ধরনের, যে প্রকৃতিরই হোক, তা নফসের খাহেশ, কামনা, বাসনা, লোভ ও লালসা থেকেই উৎসারিত হয়। আর তার গোড়াতে তিনটি প্রবল শক্তি-উৎস নিহিত থাকে। প্রথম, লোভ-লালসার শক্তি; দ্বিতীয় যৌনস্পৃহা ও কু-প্রবৃত্তি এবং তৃতীয় হচ্ছে অহমিকা-দাম্ভিকতা বোধ। সিয়ামের প্রশিক্ষণমূলক প্রভাব রয়েছে এই তিনটি শক্তি-উৎসের উপর।
রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, ‘তোমরা কি জান কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করায়? তা হচ্ছে আল্লাহর ভয় বা তাক্ওয়া ও উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জান মানুষকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করায় কোন জিনিস? একটি মুখ।’ এই মর্মে হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, অপরটি লজ্জাস্থান।’ (তিরমিযি, মিশকাত)
খোদাভীতি ও তাক্ওয়ার মহত্ব ও মহিমা অশেষ। অপরাধমুক্ত সমাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে তাক্ওয়ার কোনও বিকল্প নেই। তাক্ওয়ার অপরিসীম প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ্য রেখে আল্লাহ্ সিয়ামের মাধ্যমে তাক্ওয়া অনুশীলন করার ঘোষণা দেন। আর সিয়াম ফরয করার অন্তরালে এই তাক্ওয়ার গুণ সৃষ্টি হচ্ছে অন্যতম লক্ষ্য।
এই জন্য তাক্ওয়ার অনুশীলন দরকার। তাক্ওয়ার অনুশীলন অর্থ হচ্ছে, অপরাধমুক্ত সমাজ তৈরির জন্য এক উচ্চাঙ্গের প্রশিক্ষণ। অনেক সিয়াম পালনকারীর প্রাণ ক্ষুধা ও পিপাসায় ওষ্ঠাগত হয়। সে গোপনে পৃথিবীর সকল চক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে অনেক সুযোগ-সুবিধা লাভ করেও ক্ষুধা-তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পানি ও খাদ্যের দিকে হাত বাড়ায় না। সে অত্যন্ত কষ্ট স্বীকার করে। তাক্ওয়া নামক এ অতন্দ্রপ্রহরীর কারণে সিয়ামের বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে, তা আমরা স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারি। আল্লাহ্, আখেরাত, জাহান্নাম, এগুলোর প্রতি যাদের বিশ্বাস নেই তাদরেকে কখনও অপরাধমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। একটু সুযোগ পেলেই সে অপরাধ সংঘটিত করবে এটাই বাস্তব। আর যদি সকলের মধ্যে তাক্ওয়া উজ্জীবিত থাকত, তাহলে তাক্ওয়া সকল অপরাধ কর্ম থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে তাদেরকে বাধ্য করত।
অপরাধ প্রবণতা সংঘটিত করার ক্ষেত্রে মানুষের আত্মসংযমের ভূমিকাও কম নয়। সিয়াম মানুষের আত্মসংযমের মতো বলিষ্ঠ অনুশীলনের ব্যবস্থা করে সমাজকে অপরাধমুক্ত করার প্রয়াস গ্রহণ করেছে। রমযান মাসের সাওম মানুষকে সুশৃঙ্ঘলভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। রমযান মাসের রোযা রোযাদারদের হাত-পা-মুখ ও অন্তকরণকে সংযত করে। রোযাদার ব্যক্তিদের চক্ষু, কান, জিহবা, হাত সমস্ত অঙ্গ- প্রত্যঙ্গকে গুনাহের যাবতীয় কাজ থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে।