পারিজাত মোল্লা: বুধবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে উঠে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা। সেখানে বিচারপতি বেআইনি নিয়োগে বড়সড় হুঁশিয়ারি দিলেন। এবার চাকরি হারাতে পারেন ২০১৬ সালে প্রাথমিকে নিয়োগ হওয়া ৪২ হাজার ৯৪২ জন শিক্ষক! এবার প্রশ্নের মুখে ৪২ হাজারের বেশি প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি । এদিন গত ২০১৬ সালের নিয়োগ নিয়ে সিবিআইয়ের দায়ের করা রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে এমনটাই ইঙ্গিত দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
এই মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সেক্রেটারি হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, -‘কোনও অতিরিক্ত প্যানেল প্রকাশ করা হয়নি’ । নিয়ম অনুয়ায়ী, ৫% অ্যাডিশনাল প্যানেল তৈরি করাই হয়নি। পাশাপাশি এস বসু রায় এবং কোম্পানিকে কোনও রকম টেন্ডার ছাড়াই নিয়োগের কাজে নিযুক্ত করা হয়। তাতে ১০ লক্ষ টাকা আগাম দেওয়া হয়েছি।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এদিন শুনানি পর্বে বলেন, “২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ে একটা বাইরের এজেন্সিকে গোপন নথির (ওএমআর) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল টেন্ডার ছাড়াই। তাদেরকে আগাম পেমেন্টও দেওয়া হয়েছিল । এটা দুর্নীতি নয় তো কী ? কী করে এই সরকারের শিক্ষা দফতর এই বেআইনি কাজ মেনে নিল ?”এই নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যর নির্দেশেই হয়েছিল কি না সেটা দেখার? যেখানে ৪২ হাজার ৯৪২-এর বেশি নিয়োগ হয়েছিল । তা বাতিল বলে ঘোষণা করতে হবে কি না? তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে উল্লেখ বিচারপতির। তার জন্য ডিজিটাইজ ওয়ে মার্কশিটের বিষয়ে ৪ এপ্রিল মামলার শুনানি করা হবে। আগামী ৬ এপ্রিল ফের আর একটা মামলার শুনানি হবে বলে জানা গেছে ।
সিবিআই সূত্রে প্রকাশ , গত ২০১৪-র টেটের ওএমআর শিট সরবরাহের জন্য কোনও টেন্ডার ডাকা হয়নি, জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই জানিয়েছেন মানিক ভট্টাচার্য। রিপোর্টে সিবিআইএর দাবি অনুযায়ী মানিক আরও জানিয়েছেন, ২০১২ র টেটের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। সেখানেই প্রথম বরাত পায় এস.বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি। ভাল কাজ করায় এবং অন্য কেউ টেন্ডার জমা না দেওয়ায় ফের বরাত দেওয়া হয় এস.বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানিকে।সিবিআই এর রিপোর্ট দেখে অখুশি বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “এটা কোনও জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে ? এর থেকে তো আমি ভাল জিজ্ঞাসাবাদ করি। হাইকোর্টের অনেক আইনজীবীও এর থেকে ভাল জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। তদন্ত শেষ করতে হবে তো!” স্বাভাবিকভাবে বিচারপতির এহেন মন্তব্যে অস্বস্তি বেড়েছে সিবিআইয়ের।বিচারপতি আরও বলেন, “এত ভুরি ভুরি অনিয়মের অভিযোগ আসছে। আদালতের কাছে এত তথ্য প্রমাণ আছে যার ভিত্তিতে ২০১৪র টেটের ভিত্তিতে সংগঠিত হওয়া ২০১৬ র নিয়োগপ্রক্রিয়া খারিজ করে দেওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে এটা করলে কিছু বৈধভাবে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। একজনও বৈধপ্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমার ভাল লাগবে না। এখনও এই দুর্নীতিকে ঢাকতে কিছু দালাল বাজার ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
একটি সংস্থাকে অভিহিত করে টেন্ডার ছাড়া কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে! এটা কী হচ্ছে ? – প্রশ্ন বিচারপতির। এদিন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, “দুর্নীতির সব নদী একই সমুদ্রে গিয়ে মিশেছে , সমুদ্র থেকে মানিক বেছে তুলতে হবে। দুর্নীতির সমুদ্রে আপনারা সাহায্য করার পরেও আমি হাবুডুবু খাচ্ছি, সিবিআই তো কিছুই করছে না। তারা তো জানেও না পিছনের দরজা দিয়ে কোন কাজ হয়েছে। এই সরকারের শিক্ষাদফতর কী করে এই দুর্নীতি দেখেও তাদের চোখ বন্ধ করে রাখল সেটা ভেবে আমি বিস্মিত। শিক্ষা দফতরের কেউ কেউ হয়তো হাতে হাত রেখে এই দুর্নীতি করেছিলেন।”
প্রায় ৪২,৯৪২ জনের এই প্যানেল থাকবে না বাতিল হবে সে বিষয়ে সব পক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আগামী সপ্তাহে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।