পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: বিলকিস বানুর ধর্ষক ও তার পরিবারের ৮ সদস্যের খুনিদের মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল আগেই। বুধবার সেই মামলার শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চ গঠনে সম্মতি দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি পিএস নরসিমা ও জেবি পারদিওয়ালার বেঞ্চ বুধবার এই বেঞ্চ গঠন নিয়ে আশ্বস্ত করেছেন বিলকিস বানোকে।
মামলার শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নতুন বেঞ্চ গড়া হয়েছে। আজ বিকেলেই মামলার শুনানি শুরু হবে।’ বিলকিসের পক্ষে মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন আইনজীবী শোভা গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘শীর্ষ আদালত ১১ অপরাধীর মুক্তির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার শুনানিতে সম্মতি দেওয়ায় আমরা খুশি।’
২৪ জানুয়ারি ১১ জন অপরাধীর সাজা মকুবের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করেছিলেন বিলকিস। ওই দিনই সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়নি। সংশ্লিষ্ট বিচারকরা পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের অংশ হিসেবে অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় ব্যস্ত ছিলেন। বিলকিস বানু আবেদনে দোষীদের মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি, ২০২২ সালের ১৩ মে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ পুনর্বিবেচনা করার জন্যও একটি পৃথক আবেদন দাখিল করেছিলেন। এর আগে বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের করা মামলা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী। এরপরই নতুন করে বেঞ্চ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
২০০২ সালের গুজরাত হিংসার সময় বিলকিস বানুর বয়স ছিল মাত্র ২১। সাড়ে তিন বছরের মেয়ে এবং পরিবারের অন্য ১৫ সদস্যের সঙ্গে গ্রাম থেকে পালিয়ে তিনি ছাপারবাদ জেলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। ৩ মার্চ কাস্তে, তলোয়ার ও লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রায় ৩০ জন বিলকিস এবং তাঁর পরিবারের উপর হামলা চালিয়েছিল। হামলাকারীদের মধ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত ১১ জন অপরাধীও ছিল। বিলকিস, তাঁর মা এবং পরিবারের তিন মহিলাকে গণধর্ষণ করা হয়। পাথরে আছাড় মেরে হত্যা করা হয় বিলকিসের তিন বছর বয়সী শিশু কন্যাকে। পাশবিক নির্যাতনে জ্ঞান হারিয়েছিলেন বিলকিস। তিন ঘন্টা পরে তাঁর জ্ঞান ফিরেছিল। তখন এক আদিবাসী মহিলাদের কাছ থেকে কাপড় ধার করে এক হোম গার্ডের সাহায্যে লিমখেদা থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি । ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য বিলকিসকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল।
বিলকিসের অপরাধীদের মুক্তির সুপারিশ করেছিল গুজরাত সরকার। সেই সুপারিশ গিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্ত্রকে। গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই অপরাধীদের মুক্তি চেয়ে শীর্ষকোর্টে চিঠি পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তার পরিপ্রেক্ষিতেই দণ্ডিতরা মুক্তি পায়। গুজরাতে বীরের মর্যাদায় বরণ করা হয়েছিল এই খুনি-ধর্ষকদের। ফের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেন বিলকিস। সাজাপ্রাপ্তদের আগাম মুক্তি দেওয়ার পর প্রকাশ্যে তাদের মালা পরানো হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল সংবর্ধনা। করা হয়েছিল মিষ্টি বিতরণ। সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করে বিলকিস দাবি করেছিলেন, শীর্ষ আদালতের নিয়ম লঙ্ঘণ করে ওই ১১ জন ধর্ষককে ছেড়ে দিয়েছে গুজরাত সরকার। তবে সেই আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তাতে না থেমে সুভাষিণী আলি, মহুয়া মৈত্ররা ফের মামলা করেন শীর্ষ আদালতে। সেই মামলা গ্রহণ করে আদালত।