কৌশিক সালুই, সিউড়ি: বীরভূমের পাথরচাপুড়িতে হযরত দাতা মেহবুব শাহ্ ওয়ালি (রহ.)-এর উরস উৎসব ও মেলার আয়োজন নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হল সোমবার। সিউড়িতে এদিন উরস উৎসব ও মেলা কমিটি, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আয়োজিত হয়। উপস্থিত ছিলেন সভাধিপতি তথা সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী, বীরভূম জেলাশাসক বিধান রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক রায়-সহ উচ্চপদস্থ অধিকারিকেরা।
জানা গিয়েছে, আগামী ২৪ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত সময়কালে পাথরচাপুড়িতে দাতা সাহেবের ১৩১তম উরস উৎসব ও মেলা আয়োজিত হচ্ছে। এই সুফি সাধক ১২৯৮ বঙ্গাধের ১০ চৈত্র বাদ মাগরিব পরলোকগমণ করেন। তাঁর তিরোধান উপলক্ষ্যে প্রতি বছর এসময় উরস পালিত হয়। সেই উরস উপলক্ষ্যে শুক্রবার, ৯ চৈত্র (২৪ মার্চ) বিকেলে উরস উৎসবের অনুষ্ঠানিক সূচনা হবে। উপস্থিত থাকবেন খ্যাতনামা লোকশিল্পী মনসুর ফকির। এছাড়াও থাকবেন জেলার মন্ত্রী, বিধায়ক থেকে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা।
উরস মেলায় আসা পুণ্যার্থীদের যে কোনও ধরনের গাড়ির জন্য চলতি বছরে পার্কিং চার্জ আদায় করা হবে না বলে এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও মেলায় আসা পুণ্যার্থী বিশেষত বয়স্কদের সুবিধার কথা ভেবে সিউড়ি রেল স্টেশন থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানা গিয়েছে। রেল পুলিশ ও পরিবহন দফতরের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা বলে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি তিনটি জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হচ্ছে এবার। অনুষ্ঠান মঞ্চ এবং মাজার শরীফের ভিতরের চিত্র সরাসরি দেখানো হবে ওই বড় পর্দায়। অনুষ্ঠান মঞ্চে ৭ দিন ধরেই চলবে বিভিন্ন লোকগান, ফকিরি এবং বাউল গানের আসর। দোকানদার থেকে উদ্যোক্তা সকলেই আশাবাদী এ বছরও রেকর্ড সংখ্যক পুণ্যার্থী উপস্থিত হবেন। ফি-বছর ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ মানুষের জমায়েত হয় এই উরস মেলাতে। জেলা ও রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশ থেকেও বহু মানুষ এখানে আসেন। প্রশাসন ও মজার কমিটির অনুমান হয়তো এবার সেই ভিড় আগের বছরকেও অনেকটাই ছাপিয়ে যাবে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মাজার চত্বর থেকে শুরু করে পুরো এলাকা আলোকসজ্জায় ভরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পূণ্যার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত পানীয় জল, শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব সময় অ্যাম্বুলেন্স সহ মেডিকেল টিম ও দমকল বিভাগ মোতায়েন থাকবে।
এছাড়াও পানীয় জল এবং ব্যবহারের পানি নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিগত বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি, তাই পাথরচাপুড়ি এলাকার সিংহভাগ পুকুরের জল শুকিয়ে আসছে। মেলায় আগত পুণ্যার্থীরা যাতে স্নানের জলের জন্য কোনওভাবেই অসুবিধায় না পড়েন সেইলক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট পুকুরগুলিতে জল ভরার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পক্ষ থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সেই জল সরবরাহ করা হবে। পানীয় জলের জন্য পাইপ লাইনের মাধ্যমেই খাবার পানির ব্যবস্থা করা হবে। মাজার কমিটির পক্ষ থেকে যে লঙ্গরখানা চালু থাকে তার পরিষেবা এবার আরও উন্নত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে শৌচালয় এবং এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়টি দেখা হবে। এছাড়াও মেলাতে টাকা লেনদেনের জন্য অস্থায়ী এটিএম মেশিন বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক রায় বলেন, ‘নিরাপত্তার দেখভালের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত পুলিশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিসিটিভি এবং ওয়াচ টাওয়ার থাকছে। পাশাপাশি পুলিশের সহায়তা কেন্দ্র খোলা হচ্ছে।’
সভাধিপতি তথা বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী বলেন, ‘এ বছর মেলা থেকে কোনও ধরনের পার্কিং চার্জ আদায় করা হবে না। এছাড়াও সিউড়ি রেল স্টেশন থেকে পুর্ণার্থীদের যাওয়া আসার জন্য প্রয়োজনীয় বাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’