পারিজাত মোল্লা: শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে এক নজিরবিহীন নির্দেশ জারি করা হল। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলি বিশেষত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে সভা- মিছিল করার অনুমতি নিতে স্থানীয় থানাতে আর যেতে চায় না।
ভাঙড়ে সিপিএমের সভার অনুমতি নিয়ে বিতর্কের জেরে রাজ্যে যে কোনও দল বা সংগঠনের সভা বা মিছিল করার ক্ষেত্রে বিধি তৈরি করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ইতিপূর্বে ভাঙ্গড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীকে নিয়ে ভাঙড় কাশীপুর অঞ্চলে সিপিআইএম ও আইএসএফ বারবার মিছিল করতে চাইলেও তাতে অনুমতি দেয়নি স্থানীয় থানার পুলিশ। উল্টে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
দুই রাজনৈতিক দলই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল মিছিল করার দাবিতে। সেই মামলাতেই শুক্রবার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থার।
বিচারপতি মান্থারের নির্দেশ, ‘এখন থেকে যাবতীয় মিছিলের আবেদন জেলার এসপি বা কমিশনারেটে সিপির অফিসে করতে হবে। এতদিন থানায় করা হত। অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশ কোনও বৈষম্য করবে না সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সেখানে কোনও দল কখন আবেদন জমা দিল তা লিখিত রাখার জন্য আলাদা রেজিস্ট্রার রাখতে হবে। ক্রমিক সংখ্যা ধরে সেইসব আবেদন বিবেচনা করে অনুমতি দেবে পুলিশ। কতজন যোগ দিতে পারে তার সংখ্যা, কোথায় করতে চায় সেই জায়গা বা মিছিলের রুট জানতে হবে পুলিশকে।স্থানীয় থানা নিশ্চিত করবে, কোনওভাবে সেসব মিছিল বা সভা নিয়ে কোনও অশান্তি যেন না হয়। বাইরের কোনও লোক গোলমাল না-করতে পারে। শব্দবিধি মেনে মাইক বাজবে। সেই আবেদনের রেজিস্ট্রার যাতে অনলাইনে দেখা যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে জেলাগুলিতে’।
এর পাশাপাশি ভাঙড়ে সিপিএমের সভা করা নিয়ে জট কাটল। আগামী ২৮ মার্চ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলেই মিছিল বা সভার অনুমতি দেওয়া নিয়ে আপত্তি নেই পুলিশের সে কথা রাজ্য এদিন বিচারপতি মান্থারের এজলাসে জানিয়ে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারি মাসে আইএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে ধর্মতলার রানি রাসমণিতে জমায়েত ও মিছিল করে আইএসএফ নেতৃত্ব। অভিযোগ, ওইদিন মিছিল থেকে পুলিশকে মারার উস্কানি দেওয়া হয়েছিল। সেই জন্য আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকী-সহ মোট ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে হাইকোর্ট থেকে তাঁরা জামিন পান।
উল্লেখ্য, রাজ্যের বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রায়শই সভা / মিছিল করার অনুমতি না পেয়ে হাইকোর্টের দারস্থ হন।দেখা যায় আদালত শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেয়।কলকাতা হাইকোর্টের ফৌজদারি বিশেষজ্ঞ আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানান – ” মহামান্য বিচারপতির সভা ও মিছিল করা নিয়ে আজকের এই নির্দেশ নজিরবিহীন বলা যায়”। দেখা যায় কখনো চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ সভা / মিছিল করতে স্থানীয় থানার পুলিশের অনুমতি না পেয়ে আদালতমুখী হন।এখন সেই প্রবণতা অনেকখানি কমবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।