পারিজাত মোল্লা: গত আট থেকে নয় মাসে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় একের পর এক গ্রেফতারি যেমন চলছে। ঠিক তেমনি কলকাতা হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে বিশেষত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর সিঙ্গেল বেঞ্চে কয়েক হাজার চাকরিহীন হয়েছেন অসত উপায় অবলম্বনকারীরা। চাকরিহীনদের বড় অংশ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ থেকে সুপ্রিম কোর্ট অবধি আপিল পিটিশন দাখিল করেও বিচারপতিদের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ খারিজ করতে পারেনি।
এবার সরাসরি নিয়োগকারী সংস্থার আইনকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দাখিল হল। এর আগে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এসএসসি কে নিজ ক্ষমতা প্রয়োগের বার্তা দিয়েছেন। সেই বার্তা কার্যকর করতে গিয়ে এবার সরাসরি মামলার মুখে পড়লো এসএসসি কর্তৃপক্ষ।
নবম-দশম শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা। স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনের ১৭ নম্বর ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে।মামলায় ওই ১৭ নম্বর ধারাকে অবৈধ ঘোষণা করার আবেদন জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই আইনের জোরেই ৬১৮ জন কর্মরত শিক্ষকের সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। মামলায় রাজ্য, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্য শিক্ষা পর্ষদ সহ সব পক্ষকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ৩ এপ্রিলের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি ৩ এপ্রিল রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত , হাসান-উর-জামান সহ একাধিক ব্যক্তি স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনের ১৭ নম্বর ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছেন হাইকোর্টে। মামলাটি ওঠে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে।
এদিনের শুনানিতে বিচারপতি সব পক্ষকে ৩ এপ্রিলের মধ্যে হলফনামা জমার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, এসএসসি আইনের ১৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনও চাকরিপ্রার্থীর সুপারিশ বাতিল করার ক্ষমতা রয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের। আবেদনকারীর দিক থেকে বা কমিশনের দ্বারা সুপারিশ পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি কোনও ভুল হয়ে থাকে, তাহলে যে কোনও সময় সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করতে পারে কমিশন।
এসএসসি আইনের ১৭ নম্বর ধারায় এই ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। প্রসঙ্গত, শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক মামলার শুনানি চলছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসুর এজলাসে। এর আগে বেশ কিছু মামলার শুনানি চলাকালীন গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তিনি। সম্প্রতি নবম-দশম শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে বিচারপতি বসু তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, ‘২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নবম-দশম শ্রেণিতে প্রায় ১১ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়।
তার মধ্যে ১০ শতাংশ বা প্রায় হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে।’ এসএসসির ১৭ নং ধারা আইনের বলেই ৬১৮ জন ‘অবৈধ’ শিক্ষকের সুপারিশপত্র বাতিল করে থাকে স্কুল সার্ভিস কমিশন।এই মামলায় রাজ্য, এসএসসি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সহ সব পক্ষকে হলফনামা আদান-প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে বলেই আদালতের নির্দেশ। মামলার পরবর্তী শুনানি ৩ এপ্রিল ধার্য করা হয়েছে।