পারিজাত মোল্লা: বৃহস্পতিবার প্রয়াত হলেন রাজ্যের প্রবীণ আইনজীবী তথা সংবিধান বিশেষজ্ঞ সমরাদিত্য পাল। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। পারিবারিক সুত্রে প্রকাশ, দীর্ঘ সময় ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন । শেষ ক’দিনে শারীরিক সমস্যা আরও বৃদ্ধি পায়। এদিন জীবন যুদ্ধের লড়াই থামল তাঁর।
বৃহস্পতিবার ভোরে নিউ আলিপুরের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান এই আইনজীবী। আদালত এবং আইনজীবী মহলে ‘বাচ্চু’ নামে পরিচিত ছিলেন সমরাদিত্য পাল। পেশায় আইনজীবী হওয়ার পাশাপাশি আইন সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বইও লিখেছেন তিনি। অন্যদিকে আবার তাঁর স্ত্রী বিচারপতি রুমা পাল কলকাতা হাইকোর্টে নিযুক্ত ছিলেন একসময়ে। পরে সুপ্রিম কোর্টেও পদোন্নতি পেয়েছিলেন। কিন্তু এঁদের দুজনকে দীর্ঘ সময়ে প্রকাশ্য কোনও অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি।
এই বর্ষীয়ান আইনজীবী সিঙ্গুর ইস্যুতে টাটা মোটরসের তরফে মামলা লড়েছিলেন।২০১১ বিধানসভায় বিপুল ভোটে জয়লাভ করার পর ‘সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন বিল’ এনে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিতে সক্রিয় হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ই টাটার হয়ে মামলা লড়েন সমরাদিত্য। আদালতের রায়ের পর দু’পক্ষকে এক টেবিলে আলোচনায় বসার আহ্বানও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষমেষ তা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর এই উদ্যোগ প্রশংসিত হয়।
তাঁর প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী মহল থেকে শুরু করে বিচারপতিরা। তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই কলকাতা হাইকোর্টের সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ রাখা হয়। হাইকোর্ট এর আইনজীবী সুত্রে প্রকাশ, স্নাতকোত্তর ও এলএলবি পাশ করার পর তিনি লন্ডনের ইনার টেম্পেল থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপরেই আইনজ্ঞ হিসেবে পেশা শুরু করেন। প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী ছিলেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা তিনি লড়েছেন। টাটা গোষ্ঠীর হয়েও একাধিক মামলায় সওয়াল করেন বাচ্চু পাল। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সিঙ্গুর মামলা। সেই সময় তিনি টাটা গোষ্ঠীর হয়ে মামলা লড়েছিলেন।
এছাড়াও ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত মামলায় তিনি নির্বাচন কমিশনের হয়ে লড়ে ছিলেন। সেবার পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছিল। এছাড়াও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলা তিনি লড়েছেন। তাঁর স্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রুমা পাল। কলকাতা হাইকোর্টের লাইব্রেরী সদস্য থাকার পাশাপাশি বাচ্চু পাল কলকাতা ক্লাবের সিনিয়র সদস্য ছিলেন।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল – মুকুল বিশ্বাসরা জানান , ‘ একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন উনি, জুনিয়রদের খুব সহযোগিতা করতেন “। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী ছিলেন। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা তিনি লড়েছেন। আইনের ওপর বেশ কয়েক টি বই তিনি লিখে গেছেন