পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ধর্মান্তরকরণের প্রচেষ্টা চালানোর অভিযোগে ভারতে বারে বারেই খ্রিস্টানদের ওপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এখন ভারতে খ্রিস্টান সম্প্রদায় সেই সব অভিযোগের তথ্য সঙ্কলন করছে। দেখা যাচ্ছে ২০২৩-এর জানুয়ারি পর্যন্ত খ্রিস্টানদের ওপরে হামলার সংখ্যা চারশো ছাড়িয়েছে।
এর প্রতিবাদে ১৫০০০ মানুষ সম্প্রতি দিল্লিতে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে৷ সাদা পোশাক এবং কালো বাহুবন্ধনী পরা বিক্ষোভকারীরা ৮০ টিরও বেশি চার্চের লোকজনদের নিয়ে গঠিত হয়।
যুবক, গির্জার নেতা, সঙ্গীতজ্ঞ, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষাবিদ এবং অন্যান্য পেশাজীবীরাও বিক্ষোভ মিছিলে এতে যোগ দেন।
প্রতিবাদ মিছিলে মধ্য ভারতের ছোট-নাগপুর অঞ্চল, পাঞ্জাব, রাজস্থান, কেরালা, তামিলনাড়ু এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যের বিভিন্ন খ্রিস্টান গোষ্ঠীগুলি বাদ্যযন্ত্রের সহকারে যোগ দেয়। খ্রিষ্টানদের অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে তাদের উপর হামলা অব্যাহত রয়েছে।
ছত্তিশগড়ে সংগঠিত আক্রমণে এক হাজারেরও বেশি খ্রিষ্টানকে তাদের পৈতৃক বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং কিছু মানুষকে গ্রামে আটকে রাখা হয়। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, “ঘর ওয়াপসি”, করে আবার হিন্দুধর্মে ফিরে এসো, না হলে গ্রাম ছেড়ে চলে যাও। কথা না শুনলে হত্যা করা হবে। যারা সরে যেতে অস্বীকার করে তাদের লাঞ্ছিত , তাদের বাড়িঘর এবং উপাসনালয় ধ্বংস , ফসল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের গবাদি পশু চুরি করা হয়েছিল বলে খ্রিস্টান গোষ্ঠী গুলির দাবি।
খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার এসব ঘটনা নিয়ে ভারতের বেশ কয়েকটি মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠন একটি সংক্ষিপ্ত ‘সত্যানুসন্ধান’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ছত্তিশগড়ের দক্ষিণাঞ্চলে নারায়ণপুর এবং কোন্ডাগাঁও জেলায় গত কয়েক দিনে অসংখ্য সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে, সংগঠিত প্রচারের মাধ্যমে দুই জেলায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের মধ্যে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জোর করে হিন্দুধর্মে ধর্মান্তর করা হচ্ছে। ৯ থেকে ১৮ ডিসেম্বরের এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নারায়ণপুরে অন্তত ১৮টি এবং কোন্ডাগাঁও জেলার ১৫টি গ্রামের খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা হয়েছে। অন্তত এক হাজার মানুষ গ্রামছাড়া হয়েছেন। তাঁদের বলা হয়েছে, গ্রামে ফিরতে হলে হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে হবে। আরও হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, ধর্মান্তরিত না হলে তাঁদের হত্যা করাও হতে পারে।
প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবিরোধী আন্দোলনের পথিকৃৎ আসগর আলীর ছেলে ইরফান। তিনি সেন্টার ফর স্টাডি অব সোসাইটি অ্যান্ড সেক্যুলারিজম নামে মুম্বাইভিত্তিক থিঙ্কট্যাংকের পরিচালক। সঙ্গে ছিলেন ঝাড়খণ্ডের প্রবীণ সাংবাদিক অশোক ভার্মা, দিল্লির ক্যাথলিক বিশপ কনফারেন্স নামে একটি সংগঠনের প্রতিনিধি নিকোলাস বারলা, একটি বামপন্থী সংগঠনের প্রতিনিধি ব্রিজেন্দ্র তিওয়ারি এবং আইনজীবী ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী দুই সংগঠন।