বিশেষ প্রতিবেদন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হল। এক বছর ধরে চলমান এ যুদ্ধের ফলে বদলে গিয়েছে অনেক সমীকরণ, পট পরিবর্তন হয়েছে বিশ্ব রাজনীতির।
এমন বাস্তবতায় পুরো বিশ্বে পড়ছে এ যুদ্ধের প্রভাব। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগেই ব্যাপক আকারে সামরিক মহড়ার মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে অশনি সংকেত পাঠায় রাশিয়া।
পশ্চিমাদের শঙ্কা সত্যি করে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে দেশটি। সেদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই বিস্ফোরণ আর থেমে থেমে বিমান হামলার অ্যালার্ম বাজে ইউক্রেনে।
আর ততক্ষণে বদলাতে শুরু করে বিশ্ব রাজনীতির দৃশ্যপটও। দ্বিধাবিভক্ত হতে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। যুদ্ধ শুরুর পর আতঙ্কিত ইউক্রেনীয়রা জীবন বাঁচাতে দেশ থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিলেও এক বছরের যুদ্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সেনাসদস্যসহ হতাহত হন লক্ষাধিক অসামরিক নাগরিক। দীর্ঘ দিন ধরে চলা যুদ্ধে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ইউক্রেন।
তবে বছরজুড়ে কূটনৈতিক কৌশল, সামরিক ও আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে ইউক্রেনকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখতে মরিয়া পশ্চিমারা। ইউক্রেনের ডাকে সাড়া দিয়ে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, হিমার্স রকেট, লিওপার্ড-টু ট্যাঙ্ক যুক্ত হয়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র ভান্ডারে।
এদিকে, একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আর শর্তের বেড়াজালে রাশিয়াকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করে আসছে আমেরিকা, ব্রিটেনসহ পশ্চিমারা। তবে নিষেধাজ্ঞার পাল্টাপাল্টি খেলায় ইউরোপই বিপাকে পড়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের বাজারে জ্বালানি তেল ও গমসহ নানা ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। ফলে মন্দার কবলে পড়ে বিশ্ব।
বছরজুড়ে ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার প্রধান সংযোগ সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা, মস্কো-কিয়েভ খাদ্যশস্যচুক্তি ও নর্ডস্ট্রিম পাইপলাইনে রহস্যজনক ছিদ্র নিয়ে দ্বন্দ্বও কম হয়নি।
কূটনৈতিক শান্তি আলোচনায় যুদ্ধ বন্ধ হবে কি না তা নিয়েও চলে নানা চেষ্টা। তবে সম্প্রতি পুতিনের পরমাণু হামলার হুমকি, বাইডেনের কিয়েভ সফর ও চিনা প্রেসিডেন্টের রাশিয়া সফরের গুঞ্জন এই যুদ্ধে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রাশিয়া জানিয়েছে, পশ্চিমারা মস্কোর শর্ত মানলেই কেবল বন্ধ হবে যুদ্ধ। গত সেপ্টেম্বরের শেষদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক এবং দক্ষিণাঞ্চলের জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চল দখলে নেয়।
গণভোটের মাধ্যমে সেই নতুন অঞ্চলগুলোকে স্বাধীন ঘোষণা করে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রাশিয়ার দখলদারিকে পশ্চিমারা স্বীকৃতি দেবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়। এ অবস্থায় ২০২৩ সালের রুশ প্রতিরক্ষা বাজেট দেখে যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্লেষকরা।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে রয়েছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা। ইইউ ও ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ইউক্রেন। তবে ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্ত হওয়া মানেই রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি উল্লেখ করে কিয়েভ ও তার মিত্রদের সতর্ক করে দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ নিয়েই যুদ্ধ শুরু হয় ও চলতে থাকে।