পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: উমরাহ পালন করতে বাইকে চেপে পাকিস্তান থেকে পবিত্র ভূমি মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন ২৫ জন বাইক আরোহী। বাইকে চেপেই দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দেবেন তাঁরা। পুরো যাত্রায় তাদের ১৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। ইতিমধ্যে ওই দলটি আড়াই হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে দিয়েছে। আপাতত আরব আমিরাতের শারজাতে পৌঁছেছেন তারা। সেখানে পৌঁছানোর পর ওই দলটিকে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। তাদের চা, নাস্তা সহ ফল-মূল ও রকমারি খাবার উপহার দেন। এমনকি অনেকে তাদের রাত ও দুপুরের খাবারের আমন্ত্রণও জানান।
স্থানীয়দের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছে উমরাহ যাত্রীরা। এদিন সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুকারাম তারিন নামক এক যাত্রী জানান, আমি ৩০ বছর ধরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাইকে করে ঘুরে বেড়িয়েছি। তবে শারজায় এই প্রথমবার এলাম। এই এলাকাটি খুবই সুন্দর। এখানে প্রবেশের পর থেকে স্থানীয়দের মেহমানদারীতে আমরা সবাই মুগ্ধ হয়েছি। সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি এখানে আরও বেশ কিছু সময় থাকতে চাই। তবে তা সম্ভব নয়। আমাদের যেতে হবে। এখান থেকে আমরা দুবাই ও আবুধাবি পাড়ি দিয়ে সউদি সীমান্তে প্রবেশ করব।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, উমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একত্রিত হয়ে , লাহোর থেকে বাইকার দলটি যাত্রা শুরু করে। তাঁরা তাফতান সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইরানে প্রবেশ করেন। এরপর বন্দর আব্বাস হয়ে ফেরি করে শারজায় যায় কাফেলা। এখন পর্যন্ত তারা দুই হাজার পাঁচশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় এই উমরাহ কাফেলা।
২০১৯ সালে প্রথম বার উমরাহ যাত্রার পরিকল্পনা করে বাইকার দলটি। কিন্তু করোনার কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে করোনার জটিলতা কাটতে উমরাহর জন্য পুনরায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। একপর্যায়ে তারা প্রস্তুতি সম্পন্ন করে উমরাহর উদ্দেশ্যে রওনা শুরু করেন। উমরাহযাত্রী তারিন বলেন, ‘যাত্রা শুরুর প্রায় ছয় মাস আগে থেকে আমরা প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। যে সব দেশের ওপর থেকে আমরা যাবো তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করি। এরপর রুট ম্যাপ তৈরি করি। তারপরেই আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করি।
তবে ‘যাত্রা শুরুর আগে ছয় মাস ধরে আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। প্রতিদিন আমরা কমপক্ষে ৪০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করি। সূর্যাস্তের আগেই নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করতাম। বর্তমানে আমরা শারজায় অবস্থান করছি। আশাকরি, আগামী ১০ দিনের মধ্যে আমরা মক্কায় প্রবেশ করব।’ এদিন ইবনে বতুতার কথা টেনে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তারিন বলেন, ভ্রমণ প্রথমে আপনাকে বাকরুদ্ধ করবে, এরপর গল্পকারে পরিণত করবে। উল্লেখ্য, পাকিস্তান থেকে ইরান, ইরাক, আমিরাত, জর্ডান, সউদি সহ ছয়টি দেশে পাড়ি দিয়েছে ওই কাফেলা। ৬০ দিনে ১৪ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে। বালির ঝড়, তুষারপাতসহ নানা ধরনের প্রতিকূল আবহাওয়ার মোকাবিলা করতে করতে তারা এগিয়ে চলেছেন। এই প্রসঙ্গে অন্য আর এক যাত্রী বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের মরুভূমিতে ভারী বালির ঝড়, তীব্র তুষারপাত প্রত্যক্ষ করেছি। ইরানে প্রচণ্ড বাতাসের মধ্যে বাইক চালানো আমাদের জন্য কঠিন ছিল। তবে এই অভিজ্ঞতা আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনে সাহায্য করে বলে মনে করেন বাইকার দল।