পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ইসরাইলি জনগণের লাগাতার প্রতিরোধের মুখে পরতে হচ্ছে নেতানিয়াহু’কে। মাত্র কয়েক দিন আগেই (২৯ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এরই মধ্যে নতুন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হাজার হাজার ইসরাইলি রাস্তায় নেমেছেন। মূলত ইসরাইলি বিচার ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রস্তাব আনায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার তেল আবিবে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে প্রায় লক্ষাধিক আন্দোলনকারী শামিল হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ইসরাইলের ৭৪ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থি ও ধর্মীয় রক্ষণশীল সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারের বিভিন্ন নীতি-পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন তারা। তেলআবিবে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘এই সেটেলার সরকার আমাদের বিরুদ্ধে।’ অনেক বিক্ষোভকারীরা বলছেন, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা হুমকির মুখে রয়েছে। একইসঙ্গে অন্যরা ‘ক্রাইম মিনিস্টার’ লেখা একটি বড় ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভে হাজির হন। এটি (ক্রাইম মিনিস্টার) মূলত গত বছরগুলোতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে নিয়মিত বিক্ষোভের সময় ইসরায়েলিদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি স্লোগান।
গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে নতুন সরকার গঠনের বিষয়টি আস্থা ভোটে পাস হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন নেতানিয়াহু। আস্থা ভোটে পার্লামেন্টের ১২০ সদস্যের মধ্যে ৬৩ জন নতুন সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। আর বিপক্ষে ভোট দেন ৫৪ জন। নেতানিয়াহুর নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় এমন রাজনীতিবিদও রয়েছেন যিনি গত বছরের শেষের দিকে কর ফাঁকির কথা স্বীকার করেছিলেন। অতি-ডানপন্থি ওই রাজনীতিক একবার তার বাড়িতে এমন একজন ব্যক্তির প্রতিকৃতি রেখেছিলেন যিনি বহু ফিলিস্তিনি ইবাদাতকারীর ওপর গণহত্যা চালিয়েছিলেন। এছাড়া ৭৩ বছর বয়সী নেতানিয়াহু নিজেও আদালতে দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়ছেন এবং ইতোমধ্যেই তিনি ইসরায়েলের ইতিহাসে অন্য যে কারও চেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের ইতিহাস গড়েছেন। নেতানিয়াহু এর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল এবং ২০০৯ সালথেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তিনি তৃতীয় মেয়াদে ইহুদি এই দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন।
বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন বামপন্থি ও ইসরাইলি সংসদ নেসেটের আরব সদস্যরা। তাদের দাবি, নেতানিয়াহুর নতুন মন্ত্রিসভার প্রস্তাবিত পরিকল্পনা বিচার ব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করবে এবং সামাজিক ব্যবধান আরও বাড়াবে। বিক্ষোভকারীরা বিচারমন্ত্রী ইয়ারিভ লেভিনের নিন্দা করেছেন। বুধবার তিনি বিচারব্যবস্থা সংস্কারমূলক বিল উত্থাপন করেছেন। বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, ইয়ারিভ লেভিনের এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দেশের সর্বোচ্চ আদালত দুর্বল হবে। নেতানিয়াহুর সরকার আইনি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তারা বলেছেন, নেতানিয়াহু যেসব পরিকল্পনা করেছেন, তা তাকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেবে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করবে।