বিশেষ প্রতিবেদন: ২০২৩ এ ১০টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ২০২৪-এ লোকসভা। সেই হিসাবে চলতি বছরের ভোটই বিজেপির কাছে অ্যাসিড টেস্ট। রণনীতি বদলাচ্ছে তারা। সম্প্রতি অমিত শাহের মন্তব্যে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিজেপি কর্নাটকে কলা চলো নীতি নিয়েছে। তাই এখন থেকেই তিনি জনতা দল সেক্যুলার(জেডিস কে কড়া ভাষায় আক্রমণ করতে শুরু করেছেন। অমিত শাহ বলেছেন, কংগ্রেস বং জেডিসের মধ্যে আসলে কোনো ফারাক নেই।
জেডিসের উদ্দেশে, তিনি বলেছেন যে দল মাত্র ৩০-৩৫টি আসন জিতে কেবল ব্ল্যাকমেইল করে টিকে থাকতে চায় তাদের কপালে খারাবি আছে। এর পাল্টা দিয়েছেন কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী। অমিত শাহকে তিনি রং বদলানো গিরগিটির সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি আরও বলেন, গোয়েবলস রূপে নয়া অবতারের আবির্ভূত হয়েছেন অমিত শাহ। মিথ্যা ছড়ানোয় তাঁর জুড়ি নেই। কর্নাটকে ভোটের পরে পরিস্থিতি কি হতে পারে তা অমিত শাহ স্পষ্ট করে না বললেও, তার অনুচ্চারিত বাণী বুঝে নিয়েছেন দলের কর্মীরা। ফলে তাঁরা বুঝে নিয়েছেন যে জেডিসের সঙ্গে ভোট পরবর্তী জোট হতেও পারে।
কংগ্রেসের সঙ্গে ভোট পরবর্তী জোট গড়ে কর্নাটকে সরকার গড়েছিল জেডিস। মুখমন্ত্রী হয়েছিলেন দেবগৌড়া পুত্র কুমারস্বামী। ২৩ মে ২০১৮ তে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন কুমারস্বামী। ২০১৯ এর ২৩ জুলাই আস্থা ভোট পরাজিত হয় কংগ্রেস-জেডিস সরকারের। এখন অমিত শাহ প্রচার করছেন জেডিস বা কংগ্রেস যেহেতু একই, তাই কর্নাটকবাসী যেন তাদের ভোট দেয়। রাজনীতি সম্ভবনার শিল্প। তাই অনেকের মতে বিজেপি ভোট পরবর্তী জোটের দরজা জেডিসের জন্য খোলা রাখবে।
দিল্লিতে অসুস্থ দেবগৌড়াকে দেখতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার সবটাই যে সৌজন্য ছিল, মনটা অনেকেই মনে করছেন না। যার অর্থ জেডিসের জন্য দরজা খুলে রাখবে বিজেপি। বর্তমানে অমিত শাহদের লক্ষ্য হল জেডিসের ভোটে ফাটল ধরানো। বিজেপি এখন চাইছে জেডিসের মুসলিম ভোট কংগ্রেসের ভোটে ফাটল ধরিয়ে তার কিছু অংশ পদ্মপার্টিতে নিয়ে আসা।
কর্নাটকের ভোক্কালীগ সম্প্রদায়ের ভোট বরাবর পেয়েছেন দেবগৌড়া। পুরনো মহিসূর তাদের গড়। শাহের বক্তব্য শুনে ও বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে স্থানীয় বিজেপি নেতারা বুঝেছেন হিসাব কষে চলতে হবে। জেডিসের বিরুদ্ধে মন কিছু বলা যাবে না, যাতে পরে ঢোঁক গিলতে অসুবিধা হয়। ফলে কংগ্রেসে এবং জেডিসকে আলাদা করে তাদের সংখ্যালঘু ভোট খানিকটা ফাটল ধরিয়ে পাটিগণিতে জয়ী হতে চাইছে বিজেপি। কর্নাটকের বর্তমান বাস্তব পরিস্থিতি দেখে বিজেপি বুঝেছে পুরনো নীতিতে কর্নাটকে সরকার গড়া মুশকিল।
স্থানীয় কংগ্রেস নেতারাও স্বীকার করেন, অমিত শাহও মুসলিম ভোট পেতে চাইছেন। কংগ্রেস যেহেতু কসময় জেডিসকে বিজেপির বি টিম বলেছিল, সেটাকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। তারা চাইছে কোনোমতেই জেডিস এবং কংগ্রেসকে কাছাকাছি আসতে না দিতে। বিজেপি মনে করছে জেডিসের সংখ্যালঘু ভোট চির ধরাতে না পারলে লড়াইটা আরও কঠিন হয়ে যাবে।
২০২৩ সালে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। রাজস্থান, ছশিগড়, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, তেলেঙ্গানা সহ উর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে হবে নির্বাচন। উত্তর পুর্বে ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড এবং মিজোরামে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্র সরকার জম্মু এবং কাশ্মীরে নির্বাচন ঘোষণার বিষয়েও বিবেচনা করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ার পরে এই অঞ্চলে এটাই প্রথম নির্বাচন হবে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা জানিয়ে দিয়েছেন, উপত্যকায় নির্বাচন না হলে না হবে, তবুও কাশ্মীরিরা কেন্দ্রের কাছে ভোট ভিক্ষা করবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজেপি বেশিরভাগ রাজ্যে তার দখল পুনরুদ্ধার করতে চাইবে কিন্তু অন্যদিকে এটি কংগ্রেসের জন্যও টিকে থাকার লড়াই। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে, তারা এখন রাজস্থান, ছত্তিশগড় এবং হিমাচল প্রদেশ এই তিনটি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে। এই তিনটির মধ্যে দুটি রাজ্যে ২০২৩ সালে নির্বাচন হবে। কেরল ও লাক্ষাদ্বীপের মতো কর্নাটকেও বিজেপি সংখ্যালঘুদের কাছে টেনে নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক ভরাবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আরেকটি ত্রিশঙ্কু বিধানসভা ছিল কর্নাটক। এই নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। বিস ইয়েদুরাপ্পা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে না পাড়ায় তাকে পদত্যাগ করতে হয়। কংগ্রেস-জেডি(এস) জোট এইচডি কুমারস্বামিকে মুখ্যমন্ত্রী করে মন্ত্রিসভা গঠন করে। যদিও ১৪ মাস পরে, ক্ষমতাসীন জোটের ১৬ জন বিধায়ক দুই দিনের মধ্যে পদত্যাগ করেন এবং দুই নির্দল বিধায়ক বিজেপিকে সমর্থন দেন।
জোট ২২৪ আসনের বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় এবং বিরোধী বিজেপি-র কাছে এখন ১০৭ সদস্য রয়েছে। তিন সপ্তাহের অশান্তির পরে, ২৩ জুলাই, ২০১৯ সালে আস্থা ভোট হারার পর এইচডি কুমারস্বামি পদত্যাগ করেন। ২৬ জুলাই, ২০১৯ সালে, ইয়েদুরাপ্পা ফের কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। যদিও বিজেপিতে অভ্যন্তরীণ পালাবদলের কারণে বাসবরাজ বোম্মাই ২৭ জুলাই, ২০২১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।