পুবের কলম প্রতিবেদক: হরিয়ানার পানিপথে একই পরিবারের ৬ জনের অগ্নিদগ্ধ হয়ে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন এক স্বজন। তার নাম মুহাম্মদ রিহান। তিনি গত রাতে পানিপথ থেকে ৬ টি মৃতদেহ পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে আসছিলেন । ইসলামপুরে তাদের দাফন হওয়ার কথা ছিল। এর আগে, রাত ১টা নাগাদ, লখনউ-বুন্দেলখণ্ড এক্সপ্রেসওয়েতে যাওয়ার সময় মৃতদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। চালক চেক করে দেখে অ্যাম্বুলেন্সের পেট্রোল পাইপ ফেটে গেছে। মাঝরাতে প্রায় ৩ ঘণ্টা লাশ নিয়ে ঘোরাঘুরি করেন স্বজনরা। পরে পুলিশের সহায়তায় অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে তিনি পশ্চিমবঙ্গ এ রওয়ানা হন । এর আগে পানিপথের স্থানীয় থানার পুলিশ মৃতদেহ গুলি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায় ।
মুহাম্মদ রিহান ও অ্যাম্বুলেন্স চালক বীরেন্দ্র জানান, মৃতদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি প্রবল বেগে পৈতৃক গ্রামের দিকে যাচ্ছিল। রাত প্রায় ১২ :৫৫ নাগাদ বুন্দেলখণ্ড এক্সপ্রেসওয়েতে পৌঁছলে হঠাৎ চলন্ত অ্যাম্বুলেন্সটি একটি ঝাঁকুনিতে থামে। রাস্তার মাঝখান থেকে কোনোমতে অ্যাম্বুলেন্সটি পাশে রাখা হয়। পরে এর বনেট খুলে দেওয়া হয়। দেখা যায় পেট্রোলের পাইপ ফেটে গেছে। প্রায় দেড় ঘণ্টা রাস্তার মাঝখানে থাকার পর অ্যাম্বুলেন্সের ধাপে রাখা আরেকটি পেট্রোল পাইপ বের করেন তিনি। কিন্তু এর পরেও গাড়িটি স্টার্ট দেয়নি, ক্রেন অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ২৫ কিলোমিটার পথ চলে।
এর পর তিনি হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে সাহায্য চান। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে স্থানীয় পুলিশ।
পুলিশ ঘটনাস্থলেই ক্রেন চালককে ডেকে পাঠায়। যার সাহায্যে অ্যাম্বুলেন্সটি টেনে সেখান থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে একটি পেট্রোল পাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত তখন ৩ টা । ঘটনাস্থলে মেকানিক ডাকা হয়। যদিও পেট্রোল মিটারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেট্রোল দেখাচ্ছিল। কিন্তু তারপরও অ্যাম্বুলেন্স চালু হয়নি। এখানে অ্যাম্বুলেন্সে পেট্রোল ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করার চেষ্টা করা হয়। দুবার চেষ্টার পর অ্যাম্বুলেন্স চালু হল। আনুমানিক ৪টার দিকে স্বজনরা ওখান থেকে রওনা দেয় ।
যে ক্রেন চালক মাঝরাতে অনেক পরিশ্রম করে অ্যাম্বুলেন্সটিকে টানা করে ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে নিয়ে যান তিনি মানবতা দেখিয়ে কোনো ফি নেননি। একই সময়ে, সাহায্যের জন্য ঘটনাস্থলে ডেকে অটো মেকানিক অ্যাম্বুলেন্সটি স্পর্শ না করে ১৫০০ টাকা দাবি করে। তাকেও দুর্ঘটনার কথা বলা হলেও তিনি রাজি হননি। সর্বশেষ তার পা ছুঁয়ে ১০০০ টাকা দেওয়া হয়। এরপরও রাগ করে সেখান থেকে তিনি এক হাজার টাকা নিয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার পরশুরাম কলোনিতে অবস্থিত রাধা ফ্যাক্টরির পাশের কক্ষে গ্যাস লিকেজের কারণে আগুন লাগে। নিহতদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী ও চার সন্তান রয়েছে। শিশুদের মধ্যে ২ জন মেয়ে ও ২ জন ছেলে রয়েছে। নিহতরা হলেন- আব্দুল করিম (৫০), তার স্ত্রী আফরোজা (৪৬), বড় মেয়ে ইশরাত খাতুন (১৮), রেশমা (১৬), আব্দুল শাকুর (১০) ও আফান (৭)।
ডিএসপি হেডকোয়ার্টার ধরমবীর খারব জানান, সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিকেজ হয়েছে। চা বানাতে আগুন জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। এতে পুরো ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে ভিতরে দম বন্ধ হয়ে যায় এবং পুড়ে সবাই মারা যায়।
হরিয়ানার পানিপথে কাজে গিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃত উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের বাসিন্দা একই পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। সব মিলিয়ে মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নাবালক ও নাবালিকাও রয়েছেl
গ্যাস সিলিন্ডার লিক করে হরিয়ানার পানিপথে একই পরিবারের ছয় জনের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনায় মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী গোলাম রব্বানি। মৃত করিমের বাবা মহম্মদ সুলতান ও মায়ের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। মহম্মদ সুলতান মন্ত্রীকে তার বড় ছেলের সপরিবারে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাবার ঘটনা সবিস্তার জানান। এদিন সকালেই কলকাতা থেকে ফেরেন মন্ত্রী। তারপরই তিনি জাকিরবস্তি এলাকায় ছুটে যান। মন্ত্রী বলেন, এই ঘটনাটি অত্যান্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক।
এদিন তিনি আরও বলেন সেই বাম আমল থেকেই বহু মানুষ ভিন রাজ্যে পারি দেয় রুজি রুটির জন্য। আর একজন গেলে এলাকার আরো অনেকে যান। এই রীতি বহু দিন ধরে চলে আসছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পানিপথের প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে দেহগুলি পৌঁছানোর কথা রয়েছে। গ্রামের একই পরিবারের ৬টি তরতাজা প্রাণ হারিয়ে গোটা গ্রাম যেন শোকাচ্ছন্ন। শুক্রবারেও গ্রামে চড়েনি ভাতের হাঁড়ি।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, রাজ্যের শ্রম দফতরের উদ্যোগে ভিন্ রাজ্যে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
এই প্রসঙ্গে ইসলামপুরের বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী অবশ্য বলেন, মৃতদের পরিবারদের আর্থিক সাহায্যের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।