পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: যোশিমঠে ক্রমশই বাড়ছে ফাটল আতঙ্ক। শহরের বিভিন্ন অংশ থেকে ফাটলের শব্দ ঘুম কেড়ে নিয়েছে সাধারণ মানুষের। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে। যোশীমঠের এই অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন উত্তরাখণ্ড সরকার। শনিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন। ইতিমধ্যেই রাজ্য মোকাবিলা বাহিনীর ৫০ জনের একটি টিম উদ্ধারকাজে নেমেছে। প্রশাসনের তরফে এলাকা খালি করে বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শহরে কমপক্ষে ৫৬১টি বাড়ি, হোটেলে, দোকানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ৭৭টি পরিবারকে নিরাপদে অন্যত্র সরানো হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য চালানো অনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। ক্রমশই শহরটি ধসে পড়ছে। শুক্রবার মা ভগবতীর পুরনো একটি মন্দির আচমকাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। একাধিক বাড়ি-ঘরে ফাটল দেখা দেয়। রাস্তায় বড় ফাটল সহ পাহাড়ের গায়েও চিড় ধরেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা টাইম বোমার ওপরে বসে আছেন। স্থানীয় এক হোটেল মালিকের কথায়, হাইডেল পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য টানেল খনন করার ফলে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানান, রাস্তা চওড়া করতে,বাইপাস তৈরি করতে, আমাদের শহরের খুব কাছেই বিস্ফোরণ চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রতি মুহূর্ত কি ভয়ঙ্কর আতঙ্কের মধ্যে কাটছে বোঝাতে পারব না। যেকোনও সময়ে বাড়ি, হোটেল ভেঙে পড়ার ভয়ে শীতের রাতেও মানুষ প্রাণের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে।
এনটিপিসি’র তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং মারওয়াড়ি-হেলাং বাইপাস মোটর রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই রাস্তা বন্ধ থাকবে। যোশিমঠ-আউলি রোপওয়ে চলাচল স্থগিত সহ শহরে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সংকটজনক পরিস্থিতির কারণে, বিশেষজ্ঞ এবং বিজ্ঞানীদের একটি দল উত্তরাখণ্ডের যোশিমঠের ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় বাড়ি বাড়ি একটি সমীক্ষা চালিয়েছে।
এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের সেক্রেটারি রণজিৎ কুমার সিনহা ও গারোয়াল কমিশনার সুশীল কুমার। জেলা প্রশাসন এনটিপিসি ও এইচসিসি কোম্পানিগুলিকে দুহাজার ফ্রেবিকেটেড বাড়ি প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে এছাড়াও গুরুদোয়ারা, বিকেটিসির গেস্ট হাউস, কলেজ, আইটিআই তপোবন সহ অন্যান্য নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। ঝুঁকিবহুল ভবনগুলিকে চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। ত্রাণ শিবিরে জল, বিদ্যুৎ, খাবার, শৌচাগার এবং অন্যান্য মৌলিক সুবিধার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নোডাল অফিসারদের। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ) এবং এনডিআরএফকে ভূমিধস মোকাবিলায় সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভূমিধসের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সরকারের কাছে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে বিশেষজ্ঞ দল।
উল্লেখ্য, যোশিমঠ উত্তরাখণ্ডের অন্যতম দেবভূমি। চারধাম যাত্রার পথে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই স্থান বাবা বদ্রীনাথের শীতকালীন আবাস। একদিকে এই স্থান হিন্দু ও শিখ তীর্থস্থানগুলির জন্য প্রবেশস্থল অন্যদিকে এটি চিনের সঙ্গে ভারতের সীমান্তের কাছে অন্যতম প্রধান সামরিক ঘাঁটি বলেই পরিচিত।