আহমদ হাসান ইমরানঃ এলজিবিটি (লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সচুয়াল এবং ট্রান্সজেন্ডার) নিয়ে এখন উত্তাল পশ্চিমা বিশ্ব। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে এলজিবিটি-র সংখ্যা খুব বেশি নয়। কিন্তু তাদের যৌন অধিকার এবং সামাজিক স্বীকৃতি নিয়ে পশ্চিমারা গুরুত্বপূর্ণ এক ইস্যু হিসেবে বিশ্ব-মঞ্চে তুলে এনেছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের খ্রিস্টান রাষ্ট্রগুলিতেই এই সমকামী ব্যক্তিবর্গ এবং ভিন্ন ও অস্বাভাবিক যৌন পছন্দের অনুসারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা এবং বিদ্বেষ ক্রমশ বাড়ছে।
আর তার খবরও প্রায়ই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়।বাইবেল, কুরআন এবং বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ সমকামিতাকে মানব সমাজের মঙ্গলের জন্য অবৈধ বলে মনে করে। তাদের বক্তব্য, ঈশ্বর মানুষের জন্য যে ভূমিকা নির্দিষ্ট করেছেন, সমকামী বা লেসবিয়ানদের কার্যকলাপ সম্পূর্ণ তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে পশ্চিমা মুক্তমনাদের বক্তব্য, মানুষ হিসেবে এলজিবিটি গোষ্ঠীর যেকোনও যৌন পছন্দ কে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে, তা সে স্বাভাবিক হোক কিংবা অস্বাভাবিক। কিন্তু এই যুক্তি খোদ ইউরোপ, আমেরিকা ও রাশিয়াতে মানুষের কাছে খুব একটা গৃহীত হচ্ছে না। তারা পালটা যুক্তি দিচ্ছেন, কারও কারও পশু মৈথুন পছন্দ হতে পারে। কিন্তু এখনও কেন পশ্চিমারা তাদেরকে আইনগত স্বীকৃতি দিল না? ভারতে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে তো কারাগারে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি রাশিয়াতে একটি আইন পাস হয়েছে। গত মাসে পাস হওয়া এলজিবিটিকিউ প্রোপাগান্ডা বিলে বলা হয়েছে, এলজিবিটি লাইফস্টাইল ও যৌন পছন্দের প্রমোশন, প্রচার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর সঙ্গে শিশুদের যৌন শোষণও ওই আইনে রয়েছে। এক মাস পুরনো আইনে এখন কিছু সংশোধন আনা হয়েছে।
স্টেট ডুমার ২জন সদস্য নিনা ওস্তানিনা এবং নিকোলাই বুরলিয়েভ এই সংশোধনী এনেছেন। তাঁদের প্রস্তাবে রয়েছে, যারা এলজিবিটিকিউ প্রচার করবে, তাদের তিন বছর জেলের ব্যবস্থা থাকা উচিত। আর শিশু যৌন শোষণের মামলায় জেল হবে ৫ বছর।
অবশ্য এই সংশোধনী পাস হয়নি একটি টেকনিক্যাল কারণে। রাশিয়ার ক্রিমিনাল কোর্ট পরিবর্তনের জন্য যে প্রক্রিয়া রয়েছে, সংশোধনীতে তা মানা হয়নি। তবে এলজিবিটিকিউ প্রচার আইনের ধারাগুলি ভঙ্গ করলে আর্থিক দণ্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।সংশোধনী প্রস্তাবে রয়েছে, নাগরিকদের মধ্যে এলজিবিটিকিউ-এর প্রচার ও প্রসারের চেষ্টা করলে ৫ মিলিয়ন রুবল এবং শিশু যৌন শোষণের জন্য ১০ মিলিয়ন রুবল জরিমানা করা হবে।তবে এ বছর অক্টোবরের ২৭ তারিখে রুশ পার্লামেন্ট ডুমা সর্বসম্মতভাবে এলজিবিটিকিউ প্রোপাগান্ডা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
বলা হয় গণমাধ্যম, অনলাইন, বই-পুস্তকের মাধ্যমে, অডিও-ভিজুয়াল এবং বিজ্ঞাপনের দ্বারাও কোনও ধরনের সমকামিতা ও শিশু যৌন শোষণের প্রচার করা যাবে না।রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ সম্পর্কে বলেছেন, আমাদের পাশ্চাত্যের মূল্যবোধকে প্রতিহত করতে হবে। বিশেষ করে পাশ্চাত্য ডজনের বেশি লিঙ্গ বা জেন্ডারকে প্রমোট করতে চায়।তবে তিনি এও বলেন, কোনও কিছুই চাপিয়ে দেওয়ার আমরা বিরোধী।
ইতিমধ্যে দেখা গেছে, ২০ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্প্রিংয়ে একটি সমকামী নাইট ক্লাবে একজন বন্দুকধারী গুলি চালায়। এর ফলে ৫ জন নিহত এবং ১৮ জন গুরুতর আহত হয়েছে। সমকামীদের ওই ক্লাবের নাম ছিল ‘ক্লাব কিউ’। তাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের সম্প্রদায়ের উপর এই অনর্থক হামলায় আমরা বিপর্যস্ত বোধ করছি।
তবে যারা ওই বন্দুকধারীকে পর্যদুস্ত করে হেট ক্রাইম (ঘৃণা-অপরাধ) তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ফ্লোরিডার অর্লান্ডোতে একটি গে নাইট ক্লাবে এক বন্দুকধারী আক্রমণে ৪৯ জন নিহত হন এবং ৫০-এরও বেশি সমকামী ব্যক্তি আহত হন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুবই মুক্তমনা এক সমাজ। সমকামিতার প্রচার ও সমর্থনে সদা ব্যস্ত। তাদের দেশে এই ঘটনা একটা-দু’টো নয়, বরং প্রতি বছর বেশকিছু ঘটে চলেছে। আসলে আমেরিকায় ‘মুক্ত’ সমাজ হলেও তারা সমকামী বা লেসবিয়ানদের মেনে নিতে পারছেন না। তাই ঘটছে এই ধরনের প্রাণঘাতী হামলা। বিশ্বকাপের স্বাগতিক রাষ্ট্র কাতার সমকামীদের তাদের দেশে অভ্যর্থনা না করায় প্রবল সমালোচনা ও নিন্দা- মন্দের সম্মুখীন হয়েছে।কিন্তু কাতার সরকার মাথা নত করেনি। তারা বলছে, আমরা আমাদের সংস্কৃতি ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে বিসর্জন দিতে পারব না।এদিকে সমকামীরা এইডস, এইচআইভি, মাঙ্কিপক্স প্রভৃতি রোগ ছড়ায় বলে বিশেষজ্ঞ ও পরিসংখ্যানবিদরা জানিয়েছেন। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের বক্তব্য হচ্ছে, কোনও সম্প্রদায়কে এইসব কথা বলে হেয় করা উচিত নয়। ফলে বিতর্ক চলছেই।