পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: নিজের হাতে খুন করে বান্ধবীর দেহ ৩৫ টুকরো করে ফ্রিজে পরম যত্নে সাজিয়ে রেখে, সেই আবাসনেই অন্যান্য বান্ধবীদের নিয়ে উদ্দাম যৌনতায় মেতে উঠতেন আফতাব আমিন পুনাওয়ালা।
দক্ষিণ দিল্লির ছত্তরপুর পাহাড়ি এলাকা ৯৩/১ নম্বর ফ্ল্যাটে প্রতিদিনই চলত এই কাজ। ঘরে আসা তরুণীরা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি, ফ্রিজে রয়েছে একটি দেহ। সেটা ৩৫টি টুকরো করে কাটা। শ্রদ্ধা ওয়াকারকে খুন করে ৩০০ লিটারের কেনা ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখেছিলেন আফতাব। আফতাবের বন্ধু, ফুড ডেলিভারি বয় সহ আরও অনেকেই ওই ফ্ল্যাটে এসেছেন গত কয়েক মাসে৷ আফতাব কতটা নৃশংস, তাঁরাও কেউ টের পাননি৷ তবে কয়েকটা বিষয় ছিল আফতাবের বাড়িতে। সব সময় ধূপের গন্ধ, রুম ফ্রেশনারের জোরালো গন্ধ, পচা দুর্গন্ধ দূর করতে থাকত উগ্র কেমিক্যাল গন্ধ।
চলতি বছরের ১৮ মে খুন হন শ্রদ্ধা। তার পরে প্রায় ছয়মাস সেই আবাসনে কাটিয়ে দিলেন আফতাব। এই দীর্ঘ কয়েকটা মাস প্রতিদিন মধ্যরাতে খোলা হত সেই ফ্রিজ। যখনই শ্রদ্ধার কথা খুব মনে পড়ত, তখনই ‘বান্ধবী শ্রদ্ধার’ ট্রেতে রাখা কাটা মাথা বের করে দেখে নিতেন আফতাব। এই দীর্ঘ সময় ধরে শ্রদ্ধার শরীরে প্যাকেটে মুড়ে রাখা দেহের টুকরো অংশগুলি মেহরাউলির জঙ্গলে ছড়িয়ে দিয়েছিল সে।
বার বার বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া শ্রদ্ধাকে পরিকল্পনা মাফিক খুন করতে একটুও হাত কাঁপেনি আফতাবের। উল্টে কত নিখুঁতভাবে খুনকে পরিণতি দেওয়া যায়, সেই কাজে নিজেকে ক্রমশই পারদর্শী করে তুলেছিলেন আফতাব। ইন্টারনেট ঘেঁটে মানবদেহের শব ব্যবচ্ছেদ করে কিভাবে সেই কাটা টুকরো পরিষ্কার করতে হয়, তা শিখে নিয়েছিলেন আফতাব। কি কেমিক্যাল ব্যবহার করে কিভাবে ঘরে রক্তের দাগ মুছে দেওয়া যায়, তাও সুদক্ষ হাতে সেরেছিলেন আফতাব। পুলিশকে নিজে মুখেই সেই কথা জানিয়েছেন তিনি।
শ্রদ্ধার বাবা বিকাশ মদন ওয়াকারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ জানতে পারে ছয়মাস আগে খুন হয়ে গেছে শ্রদ্ধা। তার পরে সেই তদন্তের আরও গভীরে গিয়ে পুলিশ একের পর এক তথ্য জানতে পারে।
তদন্তকারীদের দাবি, গত ১৮ মে মাসে সম্ভবত শ্রদ্ধাকে খুন করে আফতাব৷ তার একমাস আগে আফতাব এবং শ্রদ্ধা মহারাষ্ট্র থেকে দিল্লিতে চলে আসেন৷ কারণ দু’ জনের লিভ ইন সম্পর্ক মেনে নেয়নি শ্রদ্ধার পরিবার৷
দিল্লি পুলিশের এক সিনিয়র অফিসার দাবি করেছেন, ডেটিং অ্যাপে অন্য মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাই আফতাব এবং শ্রদ্ধার মধ্যে ঝগড়ার অন্যতম মূল কারণ ছিল৷ ওই তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘আফতাব আমাদের জানিয়েছে, শ্রদ্ধা ওর সঙ্গে অন্য কারও সম্পর্কই তিনি মেনে নিতে পারতেন না৷ যদিও আফতাব অভিযোগ করেছে, ওই একই অ্যাপ ব্যবহার করে শ্রদ্ধাও অন্য পুরুষদের সঙ্গে দেখা করতেন৷ আফতাব আরও জানিয়েছে, শ্রদ্ধার দেহ ফ্রিজে রাখা থাকলেও একাধিক মহিলাকে ফ্ল্যাটে ডেকে তাঁদের শয্যাসঙ্গিনী করেছিল সে৷’
গত শনিবার থেকেই দিল্লি পুলিশের একাধিক দল, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এবং ক্রাইম টিম সেখানে তল্লাশি চালাচ্ছে৷ আফতাবের কথা মতো বেশ কিছু দেহাংশ উদ্ধারও করা হয়েছে৷ প্রাথমিক ভাবে সেগুলি মানুষেরই দেহাংশ বলে মনে করা হচ্ছে৷ ওই দেহাংশ শ্রদ্ধারই কি না, তা জানতে ডিএনএ পরীক্ষাও করা হবে৷