পুবের কলম প্রতিবেদক: করোনা টিকার বন্টন নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে ফের সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পাঠিয়ে তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘করোনা টিকার অপচয় কম হওয়া সত্বেও পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা পাচ্ছে না বাংলা। অথচ বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট বা কর্ণাটককে পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে।’ পর্যাপ্ত টিকার অভাবে রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলেও প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দেশে করোনার টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে টিকা পাওয়া নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগে সরব হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশবাসীকে বিনামূল্যে করোনার টিকা দেওয়ার জন্য সওয়ালও করেছিলেন তিনি। এমনকি রাজ্যের সাধারণ মানুষকে যাতে সঠিক সময়ে করোনার টিকা দেওয়া যায়, তার জন্য রাজ্য সরকারকে বিভিন্ন টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা থেকে সরাসরি টিকা কেনার অনুমোদন চেয়েও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। গত মাসে দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ে রাজ্যকে বাড়তি টিকা দেওয়ার জন্য অনুরোধও জানান।
এদিন প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘কোভিড মোকাবিলায় টিকাকরণের ক্ষেত্রে রাজ্য যথেষ্ট ভালো কাজ করলেও পর্যাপ্ত টিকা না পাওয়ার ফলে টিকাকরণ কর্মসূচিতে ব্যাঘাত ঘটছে। রাজ্যের প্রয়োজন ১৪ কোটি টিকা। সেখানে বুধবার পর্যন্ত ৩ কোটি ৮ লক্ষ টিকা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সম্পূর্ণ ৮৮ লক্ষ ৯৩ হাজার মানুষ। আর প্রথম ডোজ পেয়েছেন ২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ। কেন্দ্রের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত ২ কোটি ৬৮ লক্ষ ডোজ পাওয়া গিয়েছে। বাকি টিকা রাজ্য সরকার নিজেরা সংগ্রহ করেছে।’
রাজ্য সরকার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে করোনা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে, চিঠিতে তাও উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন, ‘গত মার্চ মাসে রাজ্যে শনাক্তের হার অর্থাৎ পজিটিভিটি রেট ছিল ৩ শতাংশ। এপ্রিল ও মে মাসে রাজ্যে আট দফার বিদানসভা ভোটের কারণে শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৩ শতাংশে। একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে তা বর্তমানে এক দশমিক ৫৭ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।’
বারবার করোনা টিকা চেয়ে না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট ও কর্নাটককে বেশি করে করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বঞ্চিত রাখা হচ্ছে বাংলাকে।’ অন্য রাজ্যকে বেশি টিকা দেওয়াতে তাঁর যে আপত্তি নেই তা উল্লেখ করেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, ‘অন্য রাজ্যকে পর্যাপ্ত টিকা দেওয়ায় আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু কেন পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত করা হবে?’
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি থেকে সরাসরি টিকা কেনার জন্য কেন্দ্রের কাছ থেকে অনুমতি চেয়েছিল রাজ্য। কিন্তু কেন্দ্র সরকার সেই আবেদনেরও কোনও জবাব দেয়নি বলেও চিঠিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে টিকাকরণ কর্মসূচির জন্য যে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে তাতে যে দৈনিক ১১ লক্ষ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব, তা উল্লেখ করে মমতা লিখেছেন, ‘আমরা বর্তমানে দিনে ৪ লাখ ডোজ টিকা দিচ্ছি। কিন্তু রাজ্যের কাছে দিনে ১১ লাখ ডোজ কোভিড টিকা দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে, তা তুলনায় অনেকটাই কম।’
কেন্দ্রের বঞ্চনার কারণেই যে রাজ্যের হাজার-হাজার মানুষ এখনও রোজ টিকার লাইনে দাঁড়িয়ে শূন্য হাতে ফিরে যাচ্ছেন, মোদিকে লেখা চিঠিতে তাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সামনেই করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। যদি পর্যাপ্ত টিকা না পাওয়া যায়, তাহলে যে বাংলার করোনা পরিস্থিতির ফের অবনতি ঘটতে পারে, সেই আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।