পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: প্রতিবারের মতো এবারেও দীপাবলি উৎসবে ভারতীয় সেনার সঙ্গে এই বিশেষ দিনটি কাটাবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এবছর দীপাবলির আগেই গুজরাত সহ উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশে একগুচ্ছ কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। এই মুহূর্তে গুজরাতে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার ভার্চুয়ালি গুজরাতের গান্ধীনগরে ‘ডেফএক্সপো ২০২২’ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন ‘৫২ উইং এয়ার ফোর্স স্টেশন’, দিশা’র। পাকিস্তান সীমান্তে দেশের বৃহত্তম বায়ুসেনা ঘাঁটি হয়ে উঠতে চলেছে ‘দিশা’। গুজরাতের সীমান্ত এলাকা বনসকাঁথায় তৈরি হবে দেশের বৃহত্তম বায়ুসেনা ঘাঁটি, ‘৫২ উইং এয়ার ফোর্স স্টেশন’ ‘দিশা’। এই বায়ুসেনা ঘাঁটি তৈরিতে ব্যয় হবে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, বায়ুসেনার পাশাপাশি নৌসেনাও এই ঘাঁটি কাজে লাগাবে। ‘দিশা’র কাজ শেষ হবে আগামী ২১ মাসের মধ্যেই।
দিশা উদ্বোধন করে মোদি বলেন, ‘দিশা এয়ার ফোর্স স্টেশন নির্মাণ দেশের নিরাপত্তা ও এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি। আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে দিশা মাত্র ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিশেষ করে বায়ুসেনা পশ্চিম সীমান্তের দিক থেকে আঘাত হানা শত্রুকে মোক্ষম জবাব দিতে সক্ষম হবে।
ফের কংগ্রেসকে তোপ দেগে মোদি বলেন, ‘গুজরাত সরকার ২০০০ সালে সেনা বিমানখাতের জন্য জমি দিয়েছিল। তখন আমি এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম। সেই সময় ইউপিএ শাসন চলছিল, কেন্দ্রের সরকারকে আমি এয়ার ফিল্ডের জন্য বলেছিলাম, কিন্তু তৎকালীন সরকার এই বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখায়নি।’
প্রতিরক্ষাখাতে ইতিমধ্যেই যুক্ত দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস এয়ারক্রাফট, হালকা যুদ্ধ হেলিকপ্টার ও বিমান বাহকের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদি এদিন ফের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’কে সামনে রেখে আত্মনির্ভর ভারত গড়ার ডাক দেন। ভারতে দ্রুত পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে মোদি বলেন, ‘ দেশে পরিবর্তন খুব দ্রুত ঘটছে। এদেশে একটা সময় ছিল যখন পায়রা ছাড়া হত, এখন চিতা ছাড়ার ক্ষমতা আমাদের আছে।’
প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, গোটা বিশ্ব বর্তমানে ভারতের দেশীয় প্রযুক্তিকে বিশ্বাস করছে। কারণ ভারত প্রতিরক্ষা খাতে দেশীয় সামগ্রী প্রস্তুত করে ইতিমধ্যেই সেটি প্রমাণ করেছে। ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের বহরে আইএনএস বিক্রান্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
কোচিন শিপইয়ার্ডের দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রকৌশলের এই মাস্টারপিসটি তৈরি করা হয়েছে। ভারতীয় বায়ু সেনা মেক ইন্ডিয়া অভিযানের অধীনে হালকা কমব্যাট হেলিকপ্টার অন্তর্ভুক্ত করেছে। একইভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশীয় ফিল্ড বন্দুক কিনে দেশের সীমান্ত রক্ষা করছে।
‘ডেফএক্সপো ২০২২’ উদ্বোধন করে মোদি বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ও নীতির মাধ্যমে দেশ আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে। ভারতীয় পণ্য কেনার জন্য প্রতিরক্ষা বাহিনীকে কৃতিত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রায় ৬৮ শতাংশ ভারতীয় কোম্পানিগুলির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। অর্থাৎ বাজেট দেশের মানুষের তৈরি পণ্য কিনতে ব্যবহার করা হবে। প্রতিরক্ষা বাহিনী যেভাবে সাহসের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছে তার ফলেই এই দেশের পক্ষে এই পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়েছে। আমি গর্বিত যে আমার প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আমার অফিসার আছে যারা এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
মোদি আরও বলেন, আমাদের বাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে দেশের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ যন্ত্রপাতি দেশের ভেতর থেকেই কেনা হবে। প্রতিরক্ষা বাহিনী সরঞ্জামের দুটি তালিকা তৈরি করেছে। একটি হল দেশে কেনা সরঞ্জামের তালিকা এবং দ্বিতীয়টি হল, খুব প্রয়োজন হলে বিদেশ থেকে কেনা হবে। মোদির আরও সংযোজন, ৪১১টি আইটেম দেশীয়ভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ভারতে তৈরি ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রগুলিও বেশ কয়েকটি দেশের জন্য একটি ‘প্রিয় বিকল্প’ হয়ে উঠেছে। ‘অনেক দেশ ভারতের আধুনিক যুদ্ধবিমান ‘তেজস’-এর প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে মহাকাশ গবেষণার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,’মহাকাশ প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণায় নতুন প্রজন্মের অবদান প্রয়োজন। এর ফলে তাঁদের ভবিষ্যতও উজ্জ্বল হবে। আমাদের কোম্পানিগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইজরায়েল এবং ইতালিতে প্রতিরক্ষা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করছে। নতুন ভারত যে অভিপ্রায় দেখিয়েছে তার ফলসরূপ মেক ইন ইন্ডিয়া প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সাফল্যের গল্প হয়ে উঠছে। গত পাঁচ বছরে আমাদের প্রতিরক্ষা খাতে রফতানি আট গুণ বেড়েছে এবং আমরা ৭৫টি দেশে পণ্য সরবরাহ করেছি।
এদিনের অনুষ্ঠানে মোদি ছাড়াও গান্ধীনগরে ‘ডেফএক্সপো’-তে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি বলেন, ‘ডেফএক্সপো প্রমাণ করছে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে শক্তি বাড়ছে ভারতের। এটাই ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর লক্ষ্য।’
গান্ধীনগরের ১২ তম ডেফএক্সপো চলবে আগামী ২২ অক্টোবর পর্যন্ত। এক্সপোর এবারের থিম ‘পাথ টু প্রাইড’ বা গর্বের পথ। ‘ডেফএক্সপো’-তে ‘মিশন ডেফস্পেস’-এরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।