পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: তামিলনাড়ুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট পেশ করল অরুমুগাস্বামীর কমিশন। কমিশনের দেওয়া সেই রিপোর্টে জয়ললিতার মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়েছে, তার প্রিয় বান্ধবী শশীকলাকে। জয়ললিতার মৃত্যু যে স্বাভাবিক নয়, সেটা আগেই তদন্তে উঠে আসে। এবার জয়ললিতার মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট জমা দিল কমিশন। তামিলনাড়ুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার মৃত্যুকে কোনোদিনই স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে পারেননি তার দলের অনুগামীরা। তাদের বক্তব্য ছিল জয়ললিতাকে হত্যা করা হয়েছে। জয়ার মৃত্যু পরিকল্পিত হলেও হতে পারে বলে ইঙ্গিত রয়েছে তামিলনাড়ু সরকারের গড়া তদন্ত কমিশনে।
জয়ললিতার মৃত্যুতে রহস্যের আঁচ পেয়ে শশীকলা, ও মেডিক্যাল টিমের ওপর পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পরামর্শ দেওয়া হয়। ৬০৮ পাতার দেওয়া কমিশনের সেই রিপোর্টে ‘আম্মা’র মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হল তার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু শশীকলাকে। ফলে তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য ক্রমশই ঘনীভূত হচ্ছে।
মঙ্গলবার তামিলনাড়ুর বিধানসভায় এই রিপোর্ট পেশ করে অরুমুগাস্বামীর নেতৃত্বে গঠিত এই কমিশন। ৬০৮ পাতার পেশ করা এই রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরা হয়। রিপোর্টে শশীকলার সহযোগী হিসেবে মদদ দেওয়ার অভিযোগে প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিজয় ভাস্কর ও প্রাক্তন স্বাস্থ্যসচিব রাধাকৃষ্ণণ, চিকিৎসক শিবকুমারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, হাসপাতালের তরফে জয়ললিতাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু শশীকলার নির্দেশেই সেটা সম্ভব হয়নি। জয়ললিতার হার্টের সমস্যা থাকার পরেও তার এনজিওপ্লাস্টি করা হয়নি। অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন জয়ললিতা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জয়ললিতাকে বাইরে থেকে চিকিৎসা করানোর কথা বলা হলেও সেই কথাও শোনা হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ের অ্যাপেলো হাসপাতালে মারা যান জয়ললিতা। মারা যাওয়ার আগে অ্যাপোলোতে ৭৫ দিন ভর্তি ছিলেন তিনি। অভিযোগ, তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেইভাবে কিছু প্রকাশ্যে আনেননি। বিশেষ কয়েক জনের বাইরে কেউ জানতেনই না, কেমন আছেন তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। জয়ললিতার সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেওয়া হত না।
ডাক্তারি রিপোর্টে বলা হয়েছিল, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছিলেন জয়া। দেহের একাধিক অঙ্গও কাজ করা বন্ধ করে দেয়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে এই কথা জানাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দু’মাস সময় নেয়। জয়ললিতা মারা গিয়েছিলেন ৪ তারিখ, ঘোষণা করা হয় ৫ তারিখ। পুরো ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন শশীকলা। পাশাপাশি জয়ার মৃত্যুতে বেশ কিছু অস্বাভাবিকত্বের অভিযোগ উঠেছিল। হাসপাতালে জয়ললিতাকে দেওয়া খাবার দেওয়া হত শশীকলার নির্দেশেই।
২০১৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জয়ললিতাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং তারপর সেখানে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়৷ এই গোটা প্রক্রিয়ায় কমিশনের আতসকাঁচের তলায় ছিল। আগস্ট মাসে এই নিয়ে স্ট্যালিন মন্ত্রিসভায় আলোচনাও হয়েছিল৷ এর মধ্যেই অরুমুগাস্বামীর একটি রিপোর্ট জমা করেছিলেন৷ সেটি গত মঙ্গলবার জমা পড়েছিল স্ট্যালিন প্রশাসনের কাছে৷
২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর জয়ললিতার মৃত্যু হয়৷ এর আগের এআইএডিএমকে সরকারের আমলে জয়ললিতার মৃত্যু নিয়ে একটি তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়৷ মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়৷
প্রসঙ্গত, বর্তমানে একাধিক অভিযোগে জেলে রয়েছেন শশীকলা। জয়ললিতার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু ছিলেন শশীকলা। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে। অভিযোগ, জয়ললিতাকে বিষ দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন শশীকলা। মাঝখানে দুই বন্ধুর বিচ্ছেদ হলেও পরে আবার দুজনের মধ্যে সখ্যতা তৈরি হয়েছিল।