নসিবুদ্দিন সরকার, হুগলি: ধনেখালির তাঁত ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। জিআই ট্যাগ পেয়েছেন ১৭ জন তাঁতি, কিন্তু ধনেখালির তাঁতে আধুনিকতার ছোঁয়া না লাগেনি। সময় পালটেছে,কিন্তু ধনেখালির তাঁতিদের এবং শাড়ি শিল্পে সেভাবে কোনও বদল আসেনি। তাঁতশিল্পের উল্লেখযোগ্য কোনও উন্নতি নেই। ফলে বিক্রিবাটা যেমন কমছে, তেমনি এই শিল্প ছেড়ে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন তাঁতিরা। মুখে ফিরিয়েছে নয়া প্রজন্মও।
দীর্ঘ নাকাল কাটিয়ে উৎসবের মরশুমেও তাঁতশিল্প সংকটজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন। নোট বন্দির পর থেকে ধনেখালি তাঁত ইউনিয়ন সমবায় সমিতির বিক্রিবাটা ক্রমশ সংকুচিত হয়েছে। দীর্ঘ করোনাকাল অতিবাহিত হওয়ার পর আবারও বাঙালির উৎসবমুখর দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে ধনেখালির শাড়ির বিক্রিবাটায় গতি আসবে বলে ভেবেছিলেন তাঁতশিল্পীরা, কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উলটো। বর্তমান সময়ে বিক্রিবাটায় চরম দুর্দিন চলতে থাকায় ধনেখালি তাঁত ইউনিয়ন সমবায় সমিতিতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার শাড়ি অবিক্রিত হয়ে পড়ে রয়েছে। ধনেখালির সমোসপুর সমবায় সমিতিতে পড়ে রয়েছে প্রায় ৪২ লক্ষ টাকার শাড়ি। এ বছর পাইকারি ব্যবসায়ীদের ধনেখালির তাঁতের শাড়ি কেনায় অনিহা থাকায় বিক্রিবাটায় চলছে মন্দা।
ধনেখালি ব্লকে ধনেখালি ইউনিয়ন এবং সোমসপুর ইউনিয়ন নামে দু’টি সমবায় সমিতি রয়েছে। ওই দুই সমবায় সমিতিতে আগে প্রায় ৭০০-৮০০ জন তাঁতশিল্পী ছিলেন। শাড়ির বিক্রিবাটা না থাকায় তাঁতশিল্পে চরম দুর্দশা নেমে আসে। একটা তাঁতের শাড়ি বুনতে চারজন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। একটা শাড়ি বুনতে তিন থেকে চার দিন সময় লাগে। একটা শাড়ি বুনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। তাতে শ্রমিকদের সংসার চলে না। শাড়ির বিক্রি নেই, শ্রমিকরা উপযুক্ত মজুরি পায় না, ফলে অনেকেই এই পেশা থেকে সরে যাচ্ছেন।
ধনেখালির তাঁতশিল্পকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে শাড়ির ডিজাইনে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগিয়ে আমূল পরিবর্তন ঘটাতে হবে। উন্নত আধুনিক যন্ত্রচালিত তাঁত মেশিন বসিয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকদের উপযুক্ত মজুরি দিতে হবে। উন্নতমানের অত্যাধুনিক শাড়ি তৈরি বুঁনতে হবে, তবেই এককালের স্বনামধন্য ধনেখালির তাঁতের শাড়ির ঐতিহ্য রক্ষা হবে। এমনটাই মনে করছেন ধনেখালির তাঁতিরা।
ধনেখালির দাঁতের ৬২ বছরের ইতিহাসে এত খারাপ অবস্থা কখনো হয়নি, আগে তন্তুজ থেকে ধনেখালির যে শাড়ি কেনার অর্ডার দেওয়া হত, তা এখন নেই বললেই চলে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যে ভরতুকি দেওয়া হত তাও বন্ধ হয়ে গেছে। ওই ভরতুকি দেওয়া পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়েছেন ধনেখালির তাঁতিরা। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের সাহায্য ছাড়া ধনেখালি তাঁতশিল্পকে নিয়ে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন; অভিমত তাঁতিদের।
ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র জানান, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় ধনেখালির তাঁত জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। রাজ্য সরকার তাঁতিদের জন্য তাঁতঘর, তাঁত এবং পেনশনের ব্যবস্থা করেছে। মান্ধাতার আমলের তাঁতের শাড়ির ডিজাইনের পরিবর্তন করা প্রয়োজন। তাঁতের শাড়ির ডিজাইনের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে অত্যাধুনিক শাড়ি উৎপাদন করতে পারলে ধনেখালি তাঁতের শাড়ি আবার তার গৌরবময় ঐতিহ্য ফিরে পাবে, চাই প্রযুক্তিগত নতুন দিশা। আধুনিকতা ছাড়া কোনও শিল্প বাঁচে না।