পুবের কলম প্রতিবেদক: দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে ক্যানিং পেরিয়ে সুন্দরবনের নির্দেশখালি। সেই এলাকাতে দ্বীনি পরিবেশে আধুনিক শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে সাত বছর আগে মিশনারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন মাওলানা আনোয়ার হোসেন কাসেমী। তিনি ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের জন্য গড়ে তুলেছিলেন সুন্দরবন আল-মানার গার্লস মিশন। এর পাশাপাশি আনোয়ার কাসেমী নানান সামাজিক কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। সেইকাজে নবতম সংযোজন স্বল্পমূল্যের প্যাথলজিক্যাল ল্যাব ও ওষুধের দোকান। রবিবার ছিল তারই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
এ দিনের অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা মেহরাবউদ্দিন সিদ্দিকী, প্রধান অতিথি ছিলেন পুবের কলম-এর সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমারান। এছাড়া বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা মুফতি লিয়াকত আলি, মাওলানা মোফাখখর হোসেন, মুফতি আবদুল ওহাব, সাংবাদিক আজিজুল হক, সমাজসেবী লোকমান মোল্লা, সুব্রত চক্রবর্তী প্রমুখ।
আনোয়ার হোসেন কাসেমী বলেন, সব স্তরের মানুষের কাছে শিক্ষার আলো সঠিকভাবে পৌঁছাতে চাই। তাই আল-মানার মিশন তৈরি হয়েছিল। অনেক বাধার মুখে পড়েছি, আহমদ হাসান ইমরানের মতো মানুষরা আমাকে সাহায্য করেছেন। তিনি আরও বলেন, গরিব মানুষকে শিক্ষার আঙিনায় আনতে আমরা সচেষ্ট। যাঁরা ভ্যান-রিকশা চালান সেই ঘরের ছেলেমেয়েরা যাতে কম টাকায় সঠিক পরিবেশে আধুনিকমানের শিক্ষার সুযোগ পায় সেইদিকে নজর দিয়েছি।
আনোয়ার হোসেন কাসেমী শিক্ষা বিস্তার ও সমাজসেবামূলক নানান কাজ করছেন, সেই কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন আহমদ হাসান ইমরান। তিনি বলেন, এই প্রত্যন্ত এলাকার জন্য কাসেমী সাহেব যে কাজ করছেন তা বেনজির।
একই ছাদের তলায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া আগামী দিনে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। আনোয়ার হোসেন কাসেমী পিছিয়ে পড়া সমাজে একটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন। আল-মানার মেয়েদের জন্য পৃথক ক্যাম্পাস তৈরি করেছে।
এ নিয়ে তিনি বলেন, মেয়েদের শিক্ষা খুব জরুরি। প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ছিলেন একজন নারী তিনি মা খাদিজা রা.। ইসলামে নারীদের অবদান সম্পর্কে তিনি বলেন, আয়েশা রা., মা ফাতেমা রা. ও প্রথম শহীদ সুমাইয়া রা.-এর নাম উল্লেখ করেন। আহমদ হাসান ইমরান বলেন, নারীদের সঠিকভাবে দ্বীন ও দুনিয়ার তালিম দিতে পারলে সমাজ ও দেশ এগোবে।
ভারতে বিজেপি শাসিত রাজ্যে হিজাব নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ইমরানের কথায়, এটা অন্যায়। বিকিনি পরতে পারলে হিজাব নিষিদ্ধ করা হবে কেন? তিনি প্রশ্নও তোলেন। শালীন পোশাকের উপর এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যেতে পারে না। তিনি আরও বলেন, আমাদের হিন্দু ভাইদের বোঝাতে হবে ইসলাম কী। ইসলামের সঠিক শিক্ষাকে তুলে ধরলে মানুষের মনের মধ্যে থাকা বিভেদের অর্গল ভাঙবে। সবাই যাতে আনোয়ার সাহেবের মিশনের পাশে দাঁড়ান সেই আহ্বানও জানান ইমরান।
এ দিনের অনুষ্ঠানে ফুরফুরার পীরজাদা মেহরাব উদ্দিন সিদ্দিকী আল-মানারের কাজের প্রশংসা করার পাশাপাশি বলেন, দেশের সার্বিক সমস্যা থেকে মানুষের অভিমুখ ঘোরাতে বিজেপি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে।
তাঁর কথায়, রামকে আমরা মর্যাদাপুরুষোত্তম হিসাবে দেখি, আর বিজেপি অন্য ধর্মের মানুষের উপর আঘাত হানতে তা ব্যবহার করছে। তিনি আরও বলেন, বাংলার সংস্কৃতি মিলন ও মৈত্রীর। বাংলার মুসলিমদের মধ্যে সার্বিক সচেতনতা তৈরি ও হাল-হকিকত তুলে ধরতে পুবের কলম পত্রিকার ভূমিকার কথা বলেন মেহরাব সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই ইমরান সাহেবের লেখা পড়ে বড় হয়েছি। মুসলিমদের সমস্যা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে পুবের কলম বড় ভূমিকা পালন করছে। আগে প্রথম শ্রেণির পত্রিকাগুলিতে শিরোনাম হত, ‘ঈদ শান্তিতে’। যেন ঈদে অশান্তি হওয়ার কথা ছিল। পীরজাদা আরও বলেন, বর্তমানে মূলধারার খবরের কাগজগুলো মুসলিমদের কথা তুলে ধরতে বাধ্য হচ্ছে। পুবের কলম-এর প্রভাবে তা হচ্ছে।
পুবের কলম-এর সাংবাদিক ও বাংলার রেনেসাঁ পত্রিকার আলহাজ আজিজুল হক নারী শিক্ষায় আল-মানারের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। অন্যদিকে বিশিষ্ট সমাজসেবী লোকমান মোল্লা প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে আল-মানার মিশনের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া এলাকায় জ্ঞানের আলো জ্বালাচ্ছে আল-মানার।
বিশিষ্ট মুফতি লিয়াকত আলি আল-মানার মিশনের সমাজসেবার প্রশংসা করে বিশ্বভ্রাতৃত্বের জন্য দোয়া করেন।বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন প্রধান, সমাজসেবী ওয়াহেদ আলি সেখ, মাওলানা মোফাখ্খর হোসেন প্রমুখ। রহিদুল ইসলাম লস্কর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। কাসেমী সাহেব জানান, এ দিন বিনামূল্যে চক্ষু ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় প্রায় দেড় হাজার মানুষের। যাঁদের চশমা প্রয়োজন তাঁদের বিনামূল্যেই তা দেওয়া হবে।