পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: নেই সঙ্গিনী। আর কিছুই ভালো লাগছে না। মনমরা অবস্থা। এই ঘটনা দিল্লি চিড়িয়াখানার। একা হয়ে চিড়িয়াখানার চৌহদ্দির মধ্যেই বন্দী আফ্রিকান পুরুষ হাতিটি। এই অবস্থায় দিল্লি চিড়িয়াখানার বিরুদ্ধে হাতিটির সঙ্গে অমানবিক আচরণের অভিযোগ জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে হস্তক্ষেপ করল দিল্লি হাই কোর্ট। দিল্লির চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে পুরুষ হাতিটির জন্য স্ত্রী হাতি আনার কথা বিবেচনা করার নির্দেশ দিল আদালত।
হাই কোর্টের বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছেন, হাতিটিকে দেশ থেকে আফ্রিকা পাঠানোর কোনও প্রশ্ন নেই। তাকে এই দেশে রাখা হবে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে তার দেখাশোনা করতে হবে। আদালত বুধবার চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে জানিয়েছে, একাকী পুরুষ আফ্রিকান হাতির জন্য তাকে সঙ্গ দিতে মহিলা হাতি আফ্রিকা থেকে নিয়ে আসার জন্য।
বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মা ও বিচারপতি সুব্রমণিয়াম প্রসাদের ডিভিশন বেঞ্চ সেন্ট্রাল জু অথরিটি ও অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ডকে এক নির্দেশে জানিয়েছেন, হাতিটির বিষয়ে সমস্ত তথ্য নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে হবে।
দিল্লি হাই কোর্ট তার নির্দেশে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, হাতিটিকে চিড়িয়াখানায় বন্দী করে রাখা হয়েছে কিনা ও সেই সঙ্গে হাতিকে দেশের অন্য কোনও অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যানে স্থানান্তরিত করা যেতে পারে কিনা সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আদালতে জমা দিতে হবে।
আদালত তার নির্দেশে জানিয়েছে, হাতিটিকে আফ্রিকায় স্থানান্তরিত করার জন্য কোনও নির্দেশ দেওয়া হবে না। হাতিটিকে দেশেই রাখা হবে। চিড়িয়াখানায় রেখেই কর্তৃপক্ষকে তার দেখাশোনা করতে হবে।
উল্লখ্যে, হাতিটির নাম শঙ্কর। এই পুরুষ হাতিটিকে জিম্বাবোয়ে থেকে ভারতে আনা হয় ১৯৯৮ সালে। স্ত্রী হাতির সঙ্গেই শঙ্কর এখানে এসেছিল। কিন্তু ২০০৫ সালে স্ত্রী হাতিটির মৃত্যু হয়। সেই থেকেই দিল্লি চিড়িয়াখানায় সঙ্গিনী ছাড়া একা রয়েছে শঙ্কর।
হাতিটির চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অমানবিক আচরণের অভিযোগ তুলে আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন নিকিতা ধাওয়ান নামে এক ছাত্রী।
নিকিতা আদালতকে জানিয়েছেন, শঙ্করকে খুব অমানবিকভাবে চিড়িয়াখানায় বন্দী করে রাখা হয়েছে। দিনের মধ্যে ১৭ ঘন্টা তাকে মোটা শিকল দিয়ে তার পা বেঁধে রাখা হয়। নিজের মতো করে সে চিড়িয়াখানার মধ্যে ঘুরতে পারে না। হাতিটির সঙ্গে কর্তৃপক্ষের ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতার চিত্র ফুটে উঠেছে।
আবেদনকারী আরও জানিয়েছে,শঙ্কর নির্জন কারাবাসে দিন কাটাচ্ছে। তার জীবনযাত্রার প্রভাব পড়েছে তার শরীরে। এর ফলে তার স্নায়বিক চাপ বাড়ছে। শঙ্কর মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিপর্যস্ত। শরীর দোলাতে গিয়ে স্টেরিওটাইপিক আচরণ প্রদর্শন হাতিটি। শরীরের অভিব্যক্তিতে মানসিক যন্ত্রণা প্রকাশ পাচ্ছে। ইদানীং শঙ্কর খুব হিংস্র আচরণ করছে। শুধুমাত্র চিড়িখানায় আসা দর্শকদের দেখে যে সে বিরক্ত হচ্ছে তা নয়, অন্যান্য পশু ও মাহুতের সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করছে। হাতিটি তার ঘ্রাণশক্তি হারিয়েছে, এমনকী অন্যান্য হাতির কন্ঠস্বরের মাধ্যমেও যোগাযোগ নেই তার।