পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য গত তিন বছর ধরে অপেক্ষা করে রয়েছে প্রায় ১৬ হাজার দম্পতি, সমীক্ষায় প্রকাশ। আইনি জটিলতার কারণে দত্তক নেওয়ার পদ্ধতির ধীরগতিকে এর জন্য দায়ী করা হয়েছে।
সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি (CARA) এর আধিকারিকদের দ্বারা শেয়ার করা তথ্য অনুযায়ী RTI এর জবাবে জানিয়েছে, ২৮,৫০১ জন সম্ভাব্য পিতামাতা রয়েছে যাদের হোম স্টাডি রিপোর্ট অনুমোদিত হয়েছে এবং তারা একটি সন্তানকে দত্তক নেওয়ার জন্য তালিকায় রয়েছে। ১৬, ১৫৫ দম্পতির আবেদন অনুমোদিত হয়েছে, কিন্তু তারা প্রায় গত তিন বছর ধরে অপেক্ষায় আছে। গত ২৮ জুন ৩৫৯৬ জন শিশুকে আইনত বিনামূল্যে দত্তক নেওয়ার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ১৩৮০ শিশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। এক বর্ষীয়ান কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দত্তক নেওয়ার গড় সময় ২ থেকে ২.৫ বছর। এর পর খুব কমই শিশুরই বিনামূল্যে দত্তক নেওয়ার কাজ চলে। ফলে এটি অভিভাবকদের কাছে এটি অন্যতম সমস্যার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
সরকারি তথ্য অনুসারে দত্তক সংস্থাগুলিতে থাকা ২৯৭১ জন শিশু যারা সেন্টারগুলিতে পড়ে আছে, কারণ তাদের স্পেশাল কেয়ার প্রয়োজন। এই ধরনের শিশুর সংখ্যা প্রায় ৭০০০। আবার এদের মধ্যে এমন শিশুরাও আছেন, যাদের বাবা-মায়েরা সন্তান প্রতিপালনে অক্ষম বলে তাদের এই দত্তক সেন্টারগুলিতে রেখেছে। কিন্তু তারা দত্তক নেওয়ার জন্য সম্মতি দেন, ফলে এই ধরনের শিশুদের দত্তকের তালিকায় রাখা যায়নি। সেই সঙ্গে যদি কোনও শিশুর বয়স ৫ বছরের বেশি হয়, তাহলে দত্তক নেওয়ার আগে তাদের সম্মতির প্রয়োজন। গত বছর সংসদ অধিবেশনে একটি সংসদীয় প্যানেল সুপারিশ করেছে যে, দেশে দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ করা হবে। সেই সঙ্গে দত্তক নেওয়ার পদ্ধতির নির্দেশক বিভিন্ন প্রবিধানের উপর ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করার প্রয়োজনীতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, গত বছর সরকার জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট সংশোধন করেছে যার অধীনে দেশে দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়াগুলিকে দ্রুত করার জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা এবং দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আগে, দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়াগুলি আদালতের আওতাধীন ছিল। তবে শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ থেকে আরও সহজতর করা উচিৎ। সেন্টার ফর চাইল্ড রাইটস-এর সহ-পরিচালক কুমার শৈলভ বলেছেন, দত্তক নেওয়া একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট সংশোধনের আগে আদালতের সঙ্গে জড়িত একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া ছিল। শৈলভ আরও বলেছেন, কিন্তু দত্তকের নাম করে অনেক সময় পাচারের মতো ঘটনা ঘটেছে। এখন দত্তকের প্রক্রিয়াটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসন দেখে থাকে, তাই তাদের এই ব্যাপারে আরও কড়া নজর দিতে হবে। এনজিও সেন্টার ফর অ্যাভোকেসি ও রিসার্চ-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অখিলা শিবদাস জানিয়েছেন, দত্তকের ইস্যুটি যত সহজ মনে হচ্ছে সেটি নয়, সরকার কিভাবে এই প্রক্রিয়াটিকে বাস্তবায়িত করবে তার ওপর নির্ভর করছে। জনসাধারণকে এই বিষয় শিক্ষিত করা থেকে দত্তক সন্তানকে বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করা পর্যন্ত বিস্তর প্রক্রিয়া থাকে, যেটি কর্মকর্তাদের খুব ভালো করে নজরে রাখা উচিত।
অখিলা শিবদাস আরও বলেছেন, দত্তক প্রক্রিয়াটিকে অতি সংবেদনশীলতার সঙ্গে বুঝতে হবে। কারণ এই বিষয়টিকে একটি সম্প্রদায় ও সম্ভাব্য বাবা-মায়ের কাছে বিষয়টিকে সেইভাবে উপস্থাপন করতে হবে। যে বাবা-মা দত্তক নেবে তাদের সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি (CARA)ওয়েবসাইটে গিয়ে দত্তক নেওয়ার ফর্মটি পূরণ করতে হবে। এই ব্যাপারে তারা সমাজসেবীদের সাহায্য নিতে পারে। এর পর আইনের মাধ্যমে দত্তক নেওয়ার জন্য চিহ্নিত শিশুদের প্রোফাইলগুলি তারপরে দত্তক সংস্থাগুলি তাদের সম্ভাব্য পিতামাতার সঙ্গে ভাগ করে নেয়। একজন শিশুকে দত্তক হিসেবে নির্বাচন করার পর বিষয়টি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট-এর উপর নির্ভর করে।