সাকিল আহমেদ: এখন মানুষের চাই লাভ। সে চাষের ক্ষেত্রেও। যে প্রজাতির ধান চাষ করে অল্প সময়ে বেশি ফলন মিলবে, তাতেই আগ্রহী চাষিরা। এক সময় বাংলায় নানা প্রজাতির ধান ছিল। অনেক জাতের ধান চাষের অভাবে বিলুপ্ত হতে বসেছে। দেশের ধান গবেষণা কেন্দ্রগুলিও পুরনো ধান নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী বলে মনে হয় না, তারাও চায় অধিক ফলন।
কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারি কৃষি বিভাগও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ধান সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগী বলে মনে হয় না। সেই সময় সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আগ্রহ ও উদ্যোগে বিলুপ্তপ্রায় ১০২ প্রজাতির ধান সংরক্ষণ করে চলেছেন মন্টুবাবু ওরফে কমলাকান্ত জানা। তাঁর সংগ্রহে এমন বহু প্রজাতির ধান রয়েছে, যা আর কোথাও পাওয়া যাবে না।
সারা দেশ থেকে উধাও নানা জাতের ধান। চাষির যখন মাথায় হাত তখন একজন বাঙালি তিল তিল করে আগলে রাখছেন নানা ধরনের, নানা জাতের ধানের বীজকে। তিনি যেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, বাঁচাবেন, রক্ষা করবেন, হারিয়ে যাওয়া ধানের প্রজাতি। তিনি বাংলার কৃষকদের মন্টুদা। যাঁর পোশাকি নাম কমলাকান্ত জানা। কমলাকান্তের দফতরে কত ধান। কত চাল। কত কৃষকের অন্নদাতা তিনি।
১০২ জাতের ধান সংরক্ষণ করতে নিজেই চাষ করছেন ধান জমি। এক একখণ্ড জমিতে ফলাচ্ছেন এক এক জাতের ধান। যাতে অবলুপ্ত না হয়ে যায় পুরাতন বীজ। ধন ধাণ্যে পুষ্পে ভরা এই বসুন্ধরা। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলায় ভরে উঠবে এটাই তাঁরলক্ষ্য।
শান্তিনিকেতনের গোয়ালপাড়া ছাড়িয়ে সরপুকুরডাঙা গ্রাম। সেই গ্রামেই কমলাকান্ত জানা গড়ে তুলেছেন এগরা এগ্রিকালচারাল রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি। যার ডাক নাম পূর্বিতা। তিনি কাজ করছেন গুসকরা, বাঁকুড়া, বর্ধমান জুড়ে। শুধু ১০২ রকম ধান নয়, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ডঃ দেবল দেবের নেতৃত্বে ধানের পেটেন্ট আটকে দেশকে সমৃদ্ধ করেছেন। যে পেটেন্টের দখলদারি নিতে চেয়েছিল আমেরিকা তা রুখে দিয়েছেন তাঁরা।
মন্টুবাবু কাজ করছেন আদিবাসী প্রধান এলাকার মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে। শান্তিনিকেতন শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কুঠিপাড়া গ্রাম। এই গ্রাম প্রধানত সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর। কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সম্প্রতি সাঁওতাল গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ত্রিশটি ফলের গাছ রোপন করেন। তাতে উপস্থিত ছিলেন মন্টুবাবু।
সেখানে তাঁকে সংবর্ধিত করা হয়। মন্টুবাবু ওরফে কমলাকান্ত জানা বলেন, ১৯৭২ সাল ছিল দেশজুড়ে দুর্ভিক্ষ। তিনি কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকে জানতে পারেন আমাদের দেশে বহু ধানের চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ লোভে পড়ে নতুনের ডাকে সাড়া দিয়ে বিপথে পরিচালিত হয়েছে। ফলে আমরা হারিয়ে ফেলছি পুরাতন বহু ধানের পুষ্টি সমৃদ্ধ চাল।
১০২ রকমের ধানের নাম শোনেনি এই প্রজন্মের কৃষক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। লক্ষী চূড়া, কবিরাজ, রাঁধুনি পাগল, চিনি আতপ, হাতি ধান, দাদ খানি, ভাষা মানিক ইত্যাদি প্রজাতির ধান যাতে অবলুপ্ত না হয়, তার জন্য মন্টুবাবু নিজেই ছোট ছোট জমিতে চাষ করে সংরক্ষণ করছেন ১০২ প্রজাতির ধান।