পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : এখনও বিধ্বস্ত মধ্যপ্রদেশের খারগোন। মুসলিম বিরোধী সংহিসতার ঘটনার পরেও এখনও থমথমে পরিবেশ। শহরের স্থানীয় মুসলিমদের অভিযোগ, তারা জীবন প্রায় বন্দিদশায় পরিণত হয়েছে। জেলাপ্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে প্রাচীর গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে এক এলাকায় থেকেও মুখ দেখাদেখি বন্ধ। দুই সম্প্রদায়ের মাঝে এক ফুট চওড়া ও ১০ ফুট লম্বা প্রাচীর গড়ে তোলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল রাম নবমীর কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়। সেই উত্তেজনা হিংসাত্মক চেহারা নেয়। মুসলিম বিরোধী সংহিসতাকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে এই প্রাচীর গড়ে তোলা হয়েছে। তবে স্থানীয়দের বক্তব্য, এই প্রাচীর আরও বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে।
স্থানীয় খাসওয়াদিওয়ালা মহল্লার বাসিন্দা আবদুল রহমান জানিয়েছেন, প্রায় ১৫-২০ ফুট উঁচু ব্যারিকেড দেওয়ার ফলে স্থানীয় বাজার, দোকান যাওয়া একরকম সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে যে রাস্তায় দু মিনিটে পৌঁছনো যেত এখন যেতে বহু সময় লাগে। সন্তানরা তাদের স্কুলে যেতে পারছে না। সব মিলিয়ে বন্দিদশা কাটাচ্ছি আমরা। এমনকী মসজিদে যাওয়াও প্রায় বন্ধ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমোদন নিয়েই এই ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের এই বর্ষীয়ান আধিকারিক বলেছেন, এই ব্যারিকেড দেওয়ার আগে তারা দুই সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তার পরেই এই ব্যারিকেড দেওয়া হয়।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন তাদের সঙ্গে এই নিয়ে কোনও কথা বলেনি, তারা শুধু তাদের নিজেদের মধ্যেই এই কথা বলেছিল। প্রশাসনের তরফ থেকে শুধুমাত্র মৌখিকভাবে জানানো হয়, এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে এই ব্যারিকেড দেওয়ার কথা। তবে এই ব্যারিকেডের পিছনে কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।
কিন্তু প্রশাসনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয় মানুষ। এক কথায় এলাকায় এক আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কেউ যদি কিছু জিজ্ঞাসা করতে যায় তাহলে নানা ভাবে তার বিরুদ্ধে কেস দেওয়া হচ্ছে। এমনকী তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হচ্ছে।
গত ১০ তারিখের পর থেকে মুসলিমদের উপর সংহিসতা ঘটনায় যারা ন্যায়বিচার চেয়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন তাদের নানা ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। রহমান আরও বলেন, যেই প্রতিবাদের ভাষা বলে তাকেই থানায় ডেকে পাঠানো হয়। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ ভিন্ন মত পোষণ করলে তাকে হয়রানির শিকার হতে হয়। রহমান আরও জানিয়েছেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এই এলাকায় ১৯৪৭ থেকে বসবাস করছে। কিন্তু আগে কোনদিন এই রকম ঘটনা ঘটেনি। আমার বাবা, দাদুদের কথায় আগেই সাম্প্রদায়িক হিংসা ঘটনা ঘটলে আগে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে সব মিটে যেত, কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্য রকম হয়ে গেছে।