পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: প্রকাশিত হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট-২০২২। অভাবনীয় সাফল্যের নজির গড়লেন আল আমিন মিশন-এর শিক্ষার্থীরা। মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিকেও সেই সাফল্যের ধারা ধরে রাখল তারা। বরাবরই শিক্ষাক্ষেত্রে রাজ্যের মধ্যে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নজির গড়েছে আল আমীন মিশন। উচ্চ মাধ্যমিকে যে প্রথম দশ জনের মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তার মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে আল আমীন মিশনের ৬ জন শিক্ষার্থী।
এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে মুহাম্মদ বুলবুল ইসলাম। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া থানা এলাকার মথুরাপুর গ্রামের বাসিন্দা বুলবুলের প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৩। অঙ্কে ১০০-র মধ্যে ১০০ নম্বর পেয়েছে সে। অষ্টম স্থানাধিকারী সুমাইয়া খাতুন নদিয়ার প্রত্যন্ত এলাকা চাপড়া গ্রামের বাসিন্দা। সে রসায়নে ১০০ নম্বর পেয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯১। নবম স্থানে রয়েছে সৈয়দ মুস্তাক আহমেদ। পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বাসিন্দা মুস্কাকের প্রাপ্ত ৪৯০ নম্বর। বাংলা ও অঙ্কে সে ১০০ নম্বর পেয়েছে।
তিন তিনজন পড়ুয়া মেধা তালিকার দশম স্থানে রয়েছে। এদের প্রত্যেকের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৯। সোহেল মল্লিক বাড়ি বাঁকুড়ার ইন্দাসের কুমরুল গ্রামের বাসিন্দা সোহেল অঙ্কে ১০০ নম্বর পেয়েছে। আরও দুজন আল আমীন মিশনের পড়ুয়া দশম স্থান অধিকার করেছে। তারা হল সাবনাজ সুলতানা ও সৃজা মণ্ডল। সাবনাজ মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের প্রসাদপুর গ্রামের বাসিন্দা হলেও দক্ষিণ দিনাজপুরে আল আমীন মিশনের ক্যাম্পাস থেকে পড়াশোনা করেছে। কলা বিভাগে পড়ে সে দশম স্থান অধিকার করেছে সাবনাজ। ভূগোলে পেয়েছে ১০০। নদিয়ার হরিণঘাটার বাসিন্দা সৃজা মণ্ডল আল আমীন মিশনে পড়াশোনা করে উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছে। ৪৮৯ নম্বর পেয়েছে মেধা তালিকায় দশম স্থান অধিকার করেছে। সৃজাও অঙ্কে ১০০ পেয়েছে।
আশির দশকে প্রতিষ্ঠিত আল আমীন মিশন শিক্ষাক্ষেত্রে এই উল্লেখযোগ্য নাম। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতি বছরই মেধাবী শিক্ষার্থী গড়ে তোলে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দক্ষ, সফল ছাত্রী গড়ে তোলার পিছনে অবদান রেখে চলেছেন আল আমীন মিশনের সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে থাকা আসা গরীব পরিবারের মেধাবী ছেলে-মেয়েরা আল আমীন মিশন-এর মাধ্যমে সাফল্যের খতিয়ান গড়ে তুলেছে।
আম আমীন মিশনের সম্পাদক নুরুল ইসলাম পুবের কলমকে জানালেন, প্রতি বছরই মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করে ছাত্র-ছাত্রীরা উত্তীর্ণ হয়ে থাকে। আগামীদিনে এই সমস্ত শিক্ষার্থীরা আরও সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাক, সেটাই আমরা চাই। সেইসঙ্গে আমাদের কামনা সকল শিক্ষার্থীরা একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলুক।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ষষ্ঠ স্থানাধিকারী বুলবুল ইসলাম পুবের কলমকে জানায়, পঞ্চম শ্রেণি থেকে এখানে পড়াশোনা করছি। খুব সুন্দর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে পড়াশোনা করানো হয়। এখানে না এলে সেটা বুঝতেই পারতাম না। শিক্ষকদের কাছ থেকে সব সময় গাইডেন্স পেয়েছি। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই বলে জানিয়েছে বুলবুল।
দশম স্থানাধিকারী সোহেল মল্লিকের কথায়, আমি বাঁকুড়া ছেলে। মিশনের সাফল্যের কথা শুনে এখানে ভর্তি হই। সপ্তম শ্রেণি থেকে এখানে পড়াশোনা করি। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে ধার্মিক শিক্ষাও দেওয়া হয়। পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা। স্যরেরা আমাদের বন্ধুর মতো। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখে সোহেল।
বুলবুলের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক আগেই থেকেই এই মিশনের কথা শুনে আসছি। খুব ভালো একটি প্রতিষ্ঠান। ছেলেকে এখানে পড়িয়ে আমি খুব আত্মতৃপ্তি পেয়েছি। খুব উন্নত পরিষেবা, পড়াশোনার ধরন অনেক আলাদা। ছেলের এত ভালো রেজাল্টের জন্য মিশনকেই পুরো কৃতিত্ব দিতে চাই।