মাওলানা আবদুল মান্নান : নবী করীম সা. বলেনঃ ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের (আত্মসমীক্ষা) সঙ্গে রোযা রাখলে বা সিয়াম পালন করে আল্লাহ্ পাক তার পূর্ববর্তী গুনাহ মার্জনা করে দেন।’ (আল্ হাদীস)। আত্মসমীক্ষা রমযান মাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এতে নাফস বা প্রবৃত্তিকে শাসন করা, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং আমলের প্রতি দৃঢ় সংকল্প করা যায়। ঈমান কোনও জড়পদার্থের নাম নয়, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সা.-এর প্রতি দূঢ় বিশ্বাস সম্পর্কিত মনের অবস্থার নাম। কখনও তা বৃদ্ধি পায় আবার কখনও কমতে পারে।
নিজেদের কৃতকর্মের আত্মসমালোচনাও পর্যালোচনা করলে ঈমানের গতি, প্রকৃতি বাড়া-কমাকে অনুভব করা যায়। রমযান, পরবর্তীকালে আমালের প্রতি আমাদের অলসতা ও পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা এর একটি উদাহরণ বলা যেতে পারে। আমাদের জীবনের অতিক্রান্ত সময় এবং প্রতিটি মুহূর্ত। দ্বীন ও আমালের প্রতি উদ্ভূত আবেগ-উদ্দীপনা ও নাফসের প্ররোচনের সমীক্ষা নাফসকে আমরা কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি, তার সমীক্ষা। পরকালের হিসাব-নিকাশের জন্য প্রস্তুতির সমীক্ষা। সাহাবা কিরাম রা.-গণের আত্মসমীক্ষাও আমাদের দিশারী। তাঁদের হৃদয় পরিপূর্ণ থাকতো আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সা.-এর প্রতি একনিষ্ঠ ভালোবাসা আর আখিরাতের ভয়ে তাঁদের হৃদয় সর্বদা প্রকম্পিত থাকত।
হযরত আবু লুবাবা রা. একজন সাহাবা। বনু কোরাইযার দুর্গ অবরোধকালীন সময়ে নবী করীম সা. তাঁকে ইহুদিদের সঙ্গে কথা বলার পাঠান। কথা বলার সময়ে তিনি এক মানবিক দুর্বলতার শিকার হয়ে একটি অর্থবহ ইশারা করেন। পরক্ষণেই উপলব্ধি করেন, যে পরবর্তীকালে মুসলমানদের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছুটে যান মসজিদ-এ-নববী শরীফে। শোকে একটি খুঁটির সঙ্গে ভারি শিকল দিয়ে নিজেকে বেঁধে রাখেন এবং বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ্ আমাকে ক্ষমা করেন ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি মুক্ত হবেন না। অতঃপর আল্লাহ্ পাক তাঁর তাওবা কবুল করেন। তিনি মুক্ত হন। মসজিদ-নববীতে আজও সেই খুঁটি যা তাওবার খুঁটি বা স্তম্ভ নামে বিরাজ করছে।