আহমদ হাসান ইমরান
আজ থেকে শুরু হল বরকতময় এবং কল্যাণ দ্বারা পরিপূর্ণ পবিত্র মাস মাহে রমযান। সময় ও চাঁদ দেখার তারতম্য অনুসারে মুসলিম বিশ্বের বহু দেশে শনিবারই রোযা পালন করা হয়েছে। রোযা বা সিয়াম-এর শর্ত হল– সূর্যোদয়ের বেশ কিছু আগে থেকে পানাহার– যৌনাচার ও অসৎ কাজ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিরত থাকা। এ ছাড়া মিথ্যা কথা বলা– চুরি করা– অন্যের অধিকার হরণ প্রভৃতি পাপাচার থেকেও বিরত থেকে আল্লাহ ইবাদত ও নৈকট্য লাভের জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে।
এই রমযান মাসেই পবিত্র কুরআন প্রথম নাযিল হয়েছিল। তাই এই মাসে পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াত এবং অর্থ-সহ অনুধাবন করা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। আর এই রমযান মাসের শেষ ১০ দিনের বেজোড় তারিখে রয়েছে বরকতময় একটি রাত। যে রাতের আন্তরিকতাপূর্ণ ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত থেকেও উত্তম। মাহে রমযানে রয়েছে আরও অনেক কল্যাণ। আল্লাহ্তায়ালা আমাদের রমযানে আধ্যাত্মিক উন্নতি ও আল্লাহ্র নৈকট্য হাসিলের তওফীক দিন।
কিন্তু প্রশ্ন ওঠে– ইদানীং রমযান বলতে অনেক মিডিয়াতে শুধু এ মাসে রোযা ভাঙার জন্য আয়োজিত ইফতারের খাবার-দাবারকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। রোযায় ইফতারে সুস্বাদু হালিম কোথায় কোথায় পাওয়া যাবে– কলকাতার বাজারে কত রকমের খেজুর আমদানি করা হয়েছে– রমযানের সিমাই ও লাচ্ছা কীভাবে বানাতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। মনে হবে রমযানের সিয়াম সাধনায় ইফতারের খাবার-দাবারই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রোযায় অবশ্যই ইফতার করতে বলা হয়েছে। কিন্তু খাবার-দাবার নিয়ে এত মাতামাতি করতে বারণ করা হয়েছে। বরং বলা হয়েছে– আপনি একটি খেজুর দিয়ে কিংবা তাও না থাকলে শুধুমাত্র পানি দিয়েও ইফতার করতে পারেন। আর অন্য মানুষকে ইফতারের ভাগ দিয়ে শামিল করতে বলা হয়েছে।
আর একটি জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইদানীং রমযানে চল হয়েছে ‘ইফতার পার্টি’র। এই রমযান ‘পার্টি’ অনেক সময় পাশ্চাত্য পার্টির কাছাকাছি চলে যায় (নাউজুবিল্লাহ…)। যে সংস্থা বা ব্যক্তি যত বড়লোক– তার থাকে তত বেশি আয়োজন। একজন রোযাদার এত খাবার খেতে পারবেন না জেনেও প্রত্যেকের প্লেট উপচে সাজিয়ে দেওয়া হয় নানা দামি খাবার। আমন্ত্রিতদের বেশিরভাগই বড়লোক কিংবা প্রভাবশালী। আর এতে নিমন্ত্রিত থাকেন মন্ত্রী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। যদি কোনও কারণে কোনও ব্যস্ত মন্ত্রী ওই ইফতার মজলিশে না আসতে পারেন– তাহলে আয়োজকদের দুঃখের শেষ থাকে না। মন্ত্রী না আসায় ইফতার ও সারাদিনের রোযাই যেন ব্যর্থ হয়ে গেল! মন্ত্রী বা প্রভাবশালী ব্যক্তির না আসার কারণে ইফতার জমায়েতে সেই রওনক থাকে না। দোয়া ও মোনাজাতও যেন মিইয়ে যায়। এইসব পার্টিতে ইফতারে পরস্পরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ– মোসাফা করা– কিংবা পরস্পরের খবর নেওয়ার তো কথাই ওঠে না।
এ কথা সত্যি– বেশ কয়েকজন মিলে ঈমানদার ব্যক্তিরা একসঙ্গে ইফতার করলে সওয়াব পাওয়া যায়। অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তি এমনও আছেন যে– পরিবারের সঙ্গে বসে ইফতার করার সুযোগই পান না। কিন্তু যে ইফতার পার্টিগুলিতে যে রওনক বৃদ্ধি করতে তাঁরা যান– তাতে রোযার আত্মত্যাগ– আত্মসংযম ও খোদাভীরুতার চিত্রটি কোথায় যেন হারিয়ে যায়! এই ধরনের ইফতার মজলিশ কিন্তু ইফতারের পবিত্র ধারণাটিকে অনেক সময়ই ক্ষুন্ন করে। আল্লাহ্তায়লা আমাদের সঠিকভাবে এবং তাঁর রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ মেনে সিয়াম– সেহরি এবং ইফতারের তওফীক দিন। ।