পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ ইউক্রেন ইস্যুতে উত্তপ্ত ইউরোপ। চিন্তা কম নয় আমেরিকারও। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনে যেকোনও মুহূর্তে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। তাই আগে থেকেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে পশ্চিমা বিশ্ব। ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনাদের জড়ো হওয়ার খবর পাওয়ার পরই পূর্ব ইউরোপে সম্ভাব্য মোতায়েনের জন্য প্রায় সাড়ে আট হাজার মার্কিন সেনাকে তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ইউক্রেনে সম্ভাব্য রাশিয়ান আক্রমণের জন্য আমেরিকার সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন সরকার।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন, ‘মার্কিন সেনাদের উচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে ন্যাটোর রেসপন্স ফোর্সকে শক্তিশালী করার জন্য। তবে অন্য যেকোনও জরুরি পরিস্থিতির জন্যও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ রয়েছে তাদের।’ কিরবি আরও বলেন, ‘আমেরিকা দেশে এবং বিদেশে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছে। ন্যাটোর রেসপন্স ফোর্স কাজ শুরু করা মাত্রই যেন মার্কিন বাহিনী তাতে যোগ দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
এখন ন্যাটো রেসপন্স ফোর্সে প্রায় ৪০ হাজার সেনা আছে। কিরবির কথায়, ‘ন্যাটোর রেসপন্স ফোর্স মোতায়েনের সময় বা অন্য কোনও ভাবে নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটলে, আমেরিকা দ্রুত অতিরিক্ত ব্রিগেড, সেনা, লজিস্টিক, চিকিৎসা, যুদ্ধজাহাজ, গোয়েন্দা নজরদারি, অনুসন্ধান, পরিবহন এবং সেনা দিয়ে সাহায্য করতে তৈরি।’
তবে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হবেই এমনটা নিশ্চিত করে বলেননি কিরবি। তিনি বলেছেন, আমেরিকা তার মিত্রদের শুধু এটা নিশ্চিত করতে চায় যে, যেকোনও প্রয়োজনে সেনা মোতায়েনে আমেরিকার প্রস্তুতি আছে। এদিকে, ইউক্রেনে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের দেশটি ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন সীমান্তের চার হাজার মাইলেরও বেশি এলাকাজুড়ে সেনা পাঠিয়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কার মধ্যেই মস্কোর তরফে একটি নৌ-মহড়ার ঘোষণাও এসেছে। যুদ্ধ ট্যাঙ্ক, সেনা ও অন্যান্য সামরিক যান বহন করতে সক্ষম ছয়টি রাশিয়ান ল্যান্ডিংশিপ গত সপ্তাহে ভূমধ্যসাগরের পথে যাত্রা করে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে হামলার নির্দেশ দিলে দেশটির দক্ষিণ উপকূলের এই শক্তিশালী অবস্থানকে কাজে লাগাতে পারে মস্কো। তবে রাশিয়া বরাবরই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে আসছে। এদিকে, ডেনমার্ক, স্পেন, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডসসহ কিছু ন্যাটো সদস্য ইতিমধ্যে প্রতিরক্ষা জোরদার করার জন্য পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধবিমান এবং যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। চলতি সপ্তাহে ফ্রন্টলাইন ডিফেন্ডারদের জন্য গোলাবারুদসহ প্রায় ৯০ টন অস্ত্রসামগ্রী ইউক্রেনে পৌঁছেছে। রাশিয়াকে মোকাবিলার উপায় নিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেছেন জো বাইডেন।
সোমবারের ভিডিয়ো কলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও ড্রাঘি, পলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ডুদা এবং ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, পূর্ব ইউরোপে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে ন্যাটো।
ন্যাটো জানিয়েছে তারা তাদের বাহিনীকে প্রস্তুত রেখেছে এবং পূর্ব ইউরোপে বাড়তি যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাড়তি সেনাও মোতায়েন করা হয়েছে। ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল স্টোলেনবার্গ বলেন, ন্যাটো সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এমনকি ইউরোপের দক্ষিণ-পশ্চিমেও যুদ্ধসেনা মোতায়েন করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার কয়েক দফা আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর এখন ইউক্রেন সীমান্তে যুদ্ধের আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্টোলেনবার্গ বলেছেন, ‘আমাদের সম্মিলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’।