দেবশ্রী মজুমদার,শান্তিনিকেতন: উনিশে ৭ই পৌষের উপাসনায় আচার্যের ভাষণে নরেন্দ্র মোদির স্তুতি করে প্রথা ভেঙেছিলেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সেই একইভাবে আচার্যের ভাষণ দিতে গিয়ে প্রথা ভেঙে রাজ্য সরকারকে মেলা না হওয়ার জন্য দায়ী করলেন তিনি। উপাচার্য তাঁর ভাষণে বললেন, পৌষ মেলা না হওয়ায় অন্যান্য আশ্রমিকের মতোই তাঁর অন্তরাত্মা কাঁদছে। পৌষমেলার জন্য “কুম্ভীরাশ্রু” দেখে অনেকেই টিপ্পনি কেটে বলছেন, কাঁদিয়া উপাচার্য প্রমাণ করিলেন, তাঁর অন্তরাত্মা আছে। যেমনটি রবি ঠাকুরের ছোট গল্পে কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করেন, তিনি মরেন নাই।
এদিন আচার্য পদে ভাষণ দিতে গিয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ মেনে রাজ্যসরকারের স্বাস্থ্য সচিবকে তিন তিনবার রিমাইণ্ডার দিয়ে পরামর্শ চাওয়া হয় কোভিড পরিস্থিতিতে পৌষমেলা করা যাবে কিনা। তার উত্তর পাওয়া যায়নি। যেহেতু কোভিড প্রোটোকল রাজ্যের বিষয় তাই কিছু করা যায় নি। তার প্রত্যুত্তরে উপাচার্যকে মিথ্যাবাদী বলে তীব্র আক্রমণ করেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী চন্দ্রনাথ সিংহ।
বৃহস্পতিবার সকালে চিরাচরিত প্রথা মেনে শান্তিনিকেতনের ছাতিমতলায় ব্রহ্ম উপাসনার মধ্য দিয়ে ১৪২৮ বঙ্গাব্দের পৌষ উৎসবের সূচনা হল। এদিন ছাতিমতলায় পোশাকবিধি মেনে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী অধ্যাপক ও পড়ুয়াদের প্রবেশাধিকার ছিল। তবে সকাল থেকেই অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে বেড়ার ধারে উৎসাহী পর্যটকদের ভিড় ছিল লক্ষ্য করার মতো।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর বিশ্বভারতী যখন রাজ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বারবার চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন পৌষ মেলা করা কি সম্ভব, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর আসেনি। তাই এবছর পৌষ মেলা করা সম্ভব হয়নি।
উপাচার্যের এই বক্তব্য যে সর্বৈব মিথ্যা, তা এ দিন জানান বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী তথা রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং বস্ত্র দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ।
তিনি তিনি বলেন, উপাচার্য মিথ্যা কথা বলছেন। তিনি উপাচার্যের পদের যোগ্য নন। অনেক আগেই তার মর্যাদা নষ্ট করেছেন। এর আগেও বিশ্বভারতী নিজেদের অর্থনৈতিক সমস্যার কথা বলে বসন্ত উৎসব করতে পারবে না জানালে, সেই সময়ে শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচা করে বসন্ত উৎসবের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, যদিও লকডাউন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় সে বসন্ত উৎসব আর যায়নি।
চন্দ্রনাথ বাবু আরও বলেন, রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বে আমাদের দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মেলায় তার সম্মতি যদি না থাকতো, তাহলে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বোলপুরবাসী কিভাবে এত বড় মেলার আয়োজন করতে পারত।
প্রসঙ্গত, বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ ও বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির যৌথ উদ্যোগে এবং বোলপুর পুরসভা ও বীরভূম জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বোলপুর ডাকবাংলো মাঠে বিশাল আকারে পৌষ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।