পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনে ধৃত অভিযুক্ত সাংসদ প্রোজ্জ্বল রেভান্না নিয়ে কেন নীরব কেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রশ্ন তুলল জাতীয় কংগ্রেস। শনিবার সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি অলকা লাম্বা এক সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, গত দশ বছরে মহিলাদের ন্যায়বিচার দিতে “ব্যর্থ” হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
শুক্রবার মধ্যরাতে জার্মানি থেকে বেঙ্গালুরুতে পৌঁছানোর পরপরই বিজেপির শরিক দলের এই সাংসদকে গ্রেফতার করে কর্নাটক পুলিশের গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। বেঙ্গালুরুর একটি বিশেষ আদালত তাকে ৬ জুন পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
গত ২৭ এপ্রিল রেভান্না দেশ ত্যাগ করেন। ভোট চলাকালীন সময়েই বিজেপি সমর্থিত লোকসভা ভোটের প্রার্থী প্রোজ্জ্বলের অশ্লীল ভিডিও কাণ্ড সামনে আসে। দেশজুড়ে আলোড়ন পড়ে যায়। পরিস্থিতি এতটাই প্রতিকূল হয়ে পড়ে যে, নিজেকে আইনের হাত থেকে বাঁচাতে জার্মানিতে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ ওঠে। সেই প্রসঙ্গ তুলে এ দিন অলকা প্রশ্ন তোলেন, একজন ‘গণধর্ষক’ কে পালাতে দেওয়া ‘মোদি কি গ্যারান্টি’।
কর্ণাটকের হাসান লোকসভা কেন্দ্রের জনতা দল (সেকুলার)-এর সংসদ রেভান্নাকে গ্রেফতার করে রাজ্য সরকার গঠিত সিট। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেত্রী বলেন, “আমরা কর্ণাটক সরকারকে অভিনন্দন জানাই। নরেন্দ্র মোদি ‘বেটি বাঁচাও’ স্লোগান তুলে ধরেছিলেন, কিন্তু প্রোজ্জ্বল রেভান্না বিষয়ে তাঁর নীরবতা ভাঙেননি।”
এ দিন সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলনে লাম্বা দাবি করেন, “কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এই বিষয়ে মোদিকে কেন্দ্রের সাহায্যের জন্য চিঠি লিখেছিলেন কিন্তু উত্তর পাননি। রেভান্নাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে মুখ্যমন্ত্রীকে ২১ দিন পর আবার মোদিকে চিঠি লিখতে হয়েছিল।” তারপরেই অলকা বলেন, এর ফলেই প্রমান হয় প্রধানমন্ত্রী প্রোজ্জ্বল রেভান্নাম কেস নিয়ে কতটা ‘সিরিয়াস’। একইসঙ্গে তিনি, ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের ওপর চাপ সৃষ্টির সম্ভাবনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। “আমরা প্রধানমন্ত্রীকে তার নীরবতা ভাঙার জন্য অনুরোধ করছি এবং আশ্বাস দিচ্ছি যে প্রমাণের সঙ্গে কোনোও কারসাজি হবে না এবং আমাদের কন্যাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে” – বলে জানান কংগ্রেস নেত্রী।
মোদি জামানায় নারীরা কতটা অসুরক্ষিত তা বোঝাতে মধ্যপ্রদেশের সাগরে দলিত কন্যাকে ধর্ষণ এবং তার পরিবারের উপর ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন লাম্বা। তিনি বলেন, এইক্ষেত্রে প্রথমে নির্যাতিতার ভাই নিহত হয়। পরে মারা যায় নির্যাতিতার কাকা এবং সবশেষে কাকার দেহ আনতে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্স থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় নির্যাতিতার।
পরিসংখ্যান উল্লেখ করে লাম্বা বলেন, “গত পাঁচ মাসে রাজস্থানে ১২ হাজার নারীরকে ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৬৪৪টি বালিকা। মধ্যপ্রদেশের সিধিতে ২৫টিরও বেশি আদিবাসী নারী ও ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেছেন।
সমন এড়িয়ে এবং এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের বাইরে থাকার পর, জেডি(এস) সুপ্রিমো এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার নাতি তেত্রিশ বছর বয়সী রেভান্না শুক্রবার দেশে ফেরেন। তার আগে তিনি দেশ ফিরে তদন্তের মুখোমুখি হতে চান বলে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। গ্রেফতারের পর অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শিবকুমার ধৃত রেভান্নাকে পুলিশ হেফাজতে পাঠান।
২৮ এপ্রিল হাসানের হোলেনারসিপুরা টাউন থানায় প্রোজ্জ্বলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে ৪৭ বছর বয়সী তার গৃহসহায়িকা। মহিলা প্রোজ্জ্বল এবং তার বাবা ও স্থানীয় বিধায়ক এইচ ডি রেভান্নার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। প্রোজ্জ্বলের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত তিনটি যৌন নিপীড়নের মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগও রয়েছে।
বিদেশমন্ত্রক রেভান্নার বিরুদ্ধে ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট নিয়ে শোকজ নোটিশ জারি করে। পাশাপাশি তার দাদু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া প্রোজ্জ্বলকে দেশে ফিরে তদন্তের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি তিনি বলেন তাঁর নাতি যদি দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে আইন অনুযায়ী যেন কঠোর শাস্তি হয়। পাশাপাশি জেডি(এস) প্রোজ্জ্বল রেভান্নাকে দল থেকে সাসপেন্ড করেছে। গত মাসে মোদি জেডি(এস) সাংসদকে দেশের বাইরে যেতে দেওয়ার জন্য কংগ্রেস সরকারকেই দায়ী করেছিলেন।