রফিকুল হাসান, শাসন: ভোটের আবহে যখন অশান্তির আগুনে পুড়ছে ভাঙ্গর, সেসময় পার্শ্ববর্তী শাসনে শান্তিতে ভোট। নির্বাচন এলেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত ২ ব্লকের শাসন এলাকা। নির্বাচনী প্রচারকে ঘিরে বিক্ষিপ্ত অশান্তি দেখা দিলেও ভোটের দিন শনিবার শাসনে গিয়ে দেখা গেল অশান্তির শাসনে শান্তিতে ভোট হচ্ছে। যেন একটা উৎসবের আবহ। শাসন এলাকার দাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, ফলতি বেলিয়াঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েত, শাসন গ্রাম পঞ্চায়েত, খড়িবাড়ির কীর্তিপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত ও কীর্তিপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কোনো বড় অশান্তির ঘটনা ঘটে নি। শোনা যায় নি গুলি বোমার আওয়াজও। প্রশাসন খুব দক্ষতার সঙ্গে ভোট পরিচালনা করেছে, এমনটাই মত শাসনবাসীর। যদিও শুক্রবার রাতে আমিনপুর বাজারের সন্নিকটে পলতাডাঙ্গায় উত্তেজনা ছড়ায়। শাসন থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বিক্ষিপ্ত দু একটি ঘটনা ছাড়া ভোটের দিন গোটা শাসন এলাকায় তেমন কোনো গন্ডগোলের খবর মেলে নি। যদিও বেশ কিছু বুথে বিরোধীদের এজেন্ট বসা নিয়ে শাসকদলের কর্মীদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান থাকায় কোনো বুথেই তেমন কোনো রক্তপাতের ঘটনা ঘটে নি বলে জানা গেছে। মানুষ নিজের ভোট নিজেই উৎসবের পরিবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছে।
এদিন সকাল সকাল ভোট দেন একদা শাসনের ‘ত্রাস’ প্রাক্তন সিপিআইএম নেতা মজিদ মাষ্টার। ভোট দিয়ে ফিরে খোশ মেজাজে বাড়িতে পত্রিকায় চোখ রাখেন মজিদ মাস্টার। আপনার ভোট আপনিই দিতে পেরেছেন? এই প্রশ্নের জবাবে একগাল হাসি নিয়ে তিনি বলেন নিজের ভোট নিজেই তো দিতে হবে। যদিও তৃণমূলের অভিযোগ ক্ষমতায় থাকার সময় ওই মজিদ মাস্টারের নেতৃত্বে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারতো না। যদিও তিনি এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নয় বলে তিনি ৯৮ সালে ভোটে হেরে যাওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদির ধ্যানে বসা নিয়ে তিনি কটাক্ষ করেন। তাঁর কথায় একদিকে উত্তর ভারত পুড়ছে, এদিকে আসামে বন্যা হচ্ছে, মানুষ গৃহহারা। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী ধ্যানে বসে আছেন।পাশাপাশি রাজ্য সরকার উন্নয়নে সচেষ্ট হলেও নানাবিধ জনমুখী প্রকল্পের সমালোচনা করেন মজিদ মাষ্টার। তাঁর মতে, লক্ষ্মীর ভান্ডার শুধু গরীব মহিলাদের দেওয়া হোক। এদিন তিনি নস্টালজিক হয়ে পড়েন। একদিন তিনিও শাসনে ভোট পরিচালনা করতেন। আজ ৮০ বছর বয়সে এসে অবসর উপভোগ করছি বলে মন্তব্য করেন মজিদ মাষ্টার। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা নিয়ে তাঁর ক্ষোভ, সিপিআইএম আর তাদের জায়গায় নেই। সিপিআইএম এর রাজ্য সম্পাদক ভোটে লড়ছেন, এসব নিয়েও তিনি সিপিএমের কঠোর সমালোচনা করেন।
অন্যদিকে এদিন বহু বুথে এজেন্ট বসতে দেওয়া হয় নি বলে অভিযোগ তোলেন সিপিআইএম ও আইএসএফ। যদিও এই অভিযোগকে মানতে নারাজ তৃণমূল। এ ব্যাপারে হাড়োয়া বিধানসভার তৃণমূল নেতা তথা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ একেএম ফারহাদ বলেন, উৎসবের মেজাজে শাসন এলাকায় ভোট হচ্ছে। মানুষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছে। হাড়োয়া বিধানসভায় আমরা সবচেয়ে বেশি ভোট লিড দেবো।
বিরোধীদের এজেন্ট বসানোর অভিযোগকে সরিয়ে দিয়ে ফারহাদ বলেন, আসলে নাচতে না জানলে উঠোন বাকা। বিরোধীদের কোনো জনসংযোগ নেই। মানুষ তাদের চেনে না। আমরা সারাটা বছর মানুষের সঙ্গে থাকি। তাই তারা এসব মিথ্যা অভিযোগ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাসনের খড়িবাড়ির এক আইএসএফ নেতা বলেন, ভোটের আগের দিন রাতে ধমকে চমকে বহু বুথে আমাদের এজেন্ট বসতে দেওয়া হয় নি। তবে মানুষ ভোট দিতে পারছে বলেও তিনি স্বীকার করেন।