বিশকেক, ২৩ মেঃ মধ্য এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তানে পড়াশোনা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানি পড়ুয়ারা। দেশটিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। স্থানীয়রা এই হামলা করছে বলে জানা গেছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটিতে ভারতীয় ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের সর্তকভাবে চলাফেরার নির্দেশ দিয়েছে দেশ দুটির দূতাবাস।
কিরগিজস্তানে দুর্বৃত্তদের হামলায় তিনজন পাকিস্তানি মেডিকেল শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তবে বিশকেকের পাকিস্তান দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে জানিয়েছে, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে পাকিস্তানি শিক্ষার্থী নিহতের যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।’ দেশটির একদল দুর্বৃত্ত বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের নিশানা করেছে।
বিশেষ করে যারা দেশটির রাজধানী বিশকেকের হোস্টেলে থাকেন এমন বিদেশি শিক্ষার্থীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ভারতীয় দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এর পোস্টে জানিয়েছে, ‘আমরা ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখছি। তাদেরকে আপাতত ঘর থেকে বের না হতে বলা হয়েছে।’ এছাড়াও ভারতীয় দূতাবাস যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে জরুরিভিত্তিতে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বিশকেকের পরিস্থিতি সবসময় নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। এছাড়া দূতাবাসের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখার জোর পরামর্শ দেন তিনি।
বিশকেকে আসলে কী ঘটেছে?
পাকিস্তানি ছাত্রদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সহিংস ঘটনার পর শনিবার (১৮ মে) কিরগিজস্তানে শিক্ষার্থীদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে পাকিস্তান। কিরগিজ পুলিশ বলেছে, তারা সহিংসতা দমনের জন্য মধ্য এশিয়ার দেশটির রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অ্যালার্ট করেছে। স্থানীয় এবং বিদেশিদের মধ্যে লড়াইয়ের খবরে ঘটনাস্থলে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক ভিডিওতে দেখা গেছে, স্থানীয় জনতা দরজা ভাঙছে ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের মারধর করছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে, কিরগিজ ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরে উত্তেজনা বেড়ে যায়। গত ১৩ মে’র এই মারামারিকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আতিথেয়তার স্পষ্ট লঙ্ঘন মনে করেন স্থানীয়রা। শুক্রবার রাতেও বেশ কিছু কিরগিজ কর্মী রাস্তায় নেমেছিল। যদিও পুলিশ বলেছে, তারা ১৩ মে’র মারামারির খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনজন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে। ক্ষিপ্ত স্থানীয় জনতা প্রথমে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলগুলোকে টার্গেট করে; যেখানে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা থাকে।
ভারত তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশের পড়ুয়াদের মধ্যে কিরগিজস্তান বেশ জনপ্রিয়। কারণ, মধ্য এশিয়ার এই দেশটিতেই প্রতি বছর হাজার হাজার পড়ুয়া ডাক্তারি পড়তে যান। প্রশ্ন হল, আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার মতো নামী এবং উন্নত দেশ ছেড়ে কেন মধ্য এশিয়ার এই তুলনামূলক অখ্যাত দেশে ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে হাজার হাজার পড়ুয়া ডাক্তারি পড়তে যান? কী আছে কিরগিজস্তানে?উত্তর একটাই, সাশ্রয়। কিরগিজস্তানে অনেক কম খরচে ডাক্তারি পড়া যায়। সেই এমবিবিএস ডিগ্রি আমেরিকা বা ব্রিটেনের ডিগ্রির চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।
কারণ, সেই ডিগ্রিকে মান্যতা দেয় খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জ। পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার ভারতীয়, ১১ হাজারের বেশি পাকিস্তানি এবং হাজারের বেশি বাংলাদেশি পড়ুয়া উচ্চ শিক্ষার সূত্রে কিরগিজস্তানে রয়েছেন। কিরগিজস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ডাক্তারি পড়তে ছ’বছরে তিন থেকে পাঁচ হাজার আমেরিকান ডলার খরচ হয়ে থাকে। ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য আড়াই থেকে চার লক্ষ টাকা। ভারত বা পশ্চিমের দেশগুলিতে এই ছ’বছরের কোর্সের খরচ আরও অনেক বেশি। সস্তায় এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের আশায় তাই ভারত তথা উপমহাদেশের পড়ুয়ারা কিরগিজস্তানে ভিড় করেন।